সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ‘টাইমড আউট’ করার ঘটনা খুব বেশিদিন আগের নয়। ক্রিকেটপ্রেমী হলে নিশ্চয় সেই স্মৃতি খুব সহজে ভুল যাওয়ার কথা নয় আপনার। সেদিন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাঠে দলের কঠিন সময়ে অমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন কেবল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলবেন বলেই। তাই দেশকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চে নিয়ে যেতে বিতর্ক গায়ে মাখতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি সাকিব।

স্বপ্নের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আসরে বর্ণিল ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন সাকিব। এই কথা বহুবার বহু সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয়। অথচ, নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস- সেই আসরে তাকে রেখেই যাচ্ছে বাংলাদেশ দল।

১২ জানুয়ারি, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। সেই দলে জায়গা হয়নি অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। ওহ, তিনি তো আর অলরাউন্ডার নেই। সাকিব এখন কেবলই ব্যাটার। যেই ব্যাটারের আবার কদর নেই নির্বাচকদের কাছে! যিনি আলাদাভাবে ব্যাটিং শক্তি দেখিয়ে এই মুহূর্তে আর মন জয় করতে পারেননি নির্বাচকদের কাছে। তাকে তাই বাদ দিয়ে তরুণ তাওহিদ হৃদয় ও কখনো ওয়ানডে না খেলা পারভেজ হোসেন ইমনেই বেশি আস্থা নির্বাচকদের।

অথচ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলবেন বলে সে কি চেষ্টা সাকিবের। ইংল্যান্ডে কাউন্টি লিগ খেলতে গিয়ে বোলিংয়ে ত্রুটি ধরা পড়ে। যা ঠিক করে দেশের হয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চ মাতাতে ১৭ বছর ক্রিকেট খেলা সাকিব পরীক্ষা দেন বোলিংয়ের। একবার ব্যর্থ হওয়ার পর ভেঙে না পড়ে আবারও চেষ্টা চালান। এই সময়ে বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞা কাটাতে সাকিব কতটা মরিয়া ছিলেন তা জানা যায়, লংকা টি-টেন লিগে তাকে খুব কাছ থেকে দেখা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও অন্য অনেকের কাছ থেকেই। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় সাকিবের হাড়ভাঙা খাটুনি দেশে বিস্মিত হয়েছিলেন তারা।

এরপর দ্বিতীয় দফা বোলিং পরীক্ষা দেন সাকিব। কিন্তু ওই যে নিয়তি। বোলিং দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়ানো সাকিব এবারও ব্যর্থ। তবে এই পুরনো সময়টাতে ব্যাটিংয়েও কঠোর অনুশীলন করে যাচ্ছিলেন তিনি। যেন কোনো কারণে বোলিংয়ে পাস না করা গেলেও ব্যাটিংয়ে লেটার মার্ক তোলা যায়। যেমনটা তিনি করে দেখিয়েছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে। যেই আসরে বিশ্ব ক্রিকেটেই ব্যাটিং দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন সাকিব। আজ অবধি যা করতে পারেনি বাংলাদেশের আর কেউ।

২০১৯ বিশ্বকাপে ব্যাটার সাকিবকে চিনেছিল বিশ্ব। সেই আসরে আসরের তৃতীয় সর্বাধিক ৬০৬ রান এসেছিল সাকিবের ব্যাট থেকে। যেখানে ৮ ইনিংসে ৫টি ফিফটি ও ২টি সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব। প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও যে তিনি কম যান না সেটাই ছিল নিন্দুকদের জন্য সাকিবের সেরা জবাব।

সেই তিনি আরও একবার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। ক্যারিয়ারের গোধূলি বেলায় রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিয়ে দেশে না ফিরে বরং বিদেশে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির। যাতে তাকে খেলানোর ব্যাপারে কঠোর না হয় বিসিবি ও সরকার। সে জন্য নিয়মিত যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছেন সাকিব। স্বপ্ন; যেকোনো মূল্যে দেশের হয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মাঠে নামা। ক্যারিয়ারের শেষটা রাঙিয়ে জার্সি তুলে রাখা। তবে নিয়তির লিখন খণ্ডাতে পারেননি সাকিব।

সাকিব হেরে গেছেন ভাগ্যের কাছেই। নয়তো পরিস্থিতি একই রকম থাকলে। সাকিব নিয়মিত দেশে ক্রিকেট খেলতে পারলে এই ব্যাটার সাকিবেই বাদ দেই সেই সাধ্য কার? তাই নিয়তির কারণেই হয়তো এখন সাকিবকে নির্বাচকদের কাছ থেকে শোনতে হয়, ব্যাটার হিসেবে সাকিবকে দলে জায়গা দেওয়া যায়নি।

সাকিবকে না রাখা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফের ভাষ্য, ‘বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যায় পরীক্ষায় নেগেটিভ সাকিব। তাই শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলতে পারবেন। আমরা তাকে দল গঠনে ব্যাটার হিসেবে বিবেচনা করেছি। কিন্তু কম্বিনেশনে শুধু ব্যাটার হিসেবে তাকে জায়গা দেওয়া যায়নি।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের এখন এটাই নিয়তি।