সাকিবের ২০২৪: নির্বাচনে শুরু, নিষেধাজ্ঞায় শেষ
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম
সাকিব আল হাসান
জীবনে অনেক স্মরণীয় সময় কাটিয়েছেন। কোনো কোনো বছর হয়ত স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে সাকিব আল হাসানের কাছে। কিন্তু ২০২৪ সাল এই অলরাউন্ডারের জন্য ছিল একেবারেই অন্যরকম। শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো, বছরের প্রথম মাসেই প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর বছরের শেষ মাসে বোলিং অ্যাকশন জটিলতায় নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়েছে তাকে।
তবে এই শুরু আর শেষের মাঝখানে যা হয়েছে, তা এককথায় সাকিবের জীবনকে উল্টে-পাল্টে দিয়েছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব বরাবরই উচ্চাভিলাষী। ক্রিকেটে যেমন তিন ফরম্যাটের শীর্ষ অলরাউন্ডার হয়ে শিখর ছুঁয়েছেন, তেমনি ক্রিকেটের বাইরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার বিচরণ ছিল। ব্যবসা আর রাজনীতি নিয়ে একসময় এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, ক্রিকেটটাই তার জীবনে গৌণ হয়ে গিয়েছিল।
তবে গত ৫ আগস্ট তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে সাকিবের সাজানো সাম্রাজ্য। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হতেই সাকিবের জীবনে পরিবর্তনের শুরু। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের হয়েই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাগুরা থেকে নির্বাচন করেছিলেন, জয়ী হয়েছিলেন সাকিব।
দেশে যখন কোটা আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় পেটোয়া বাহিনীর হাতে ছাত্রদের রক্ত ঝরছে, তখন সাকিব যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডায় খেলে বেড়াচ্ছেন। দেশের একজন সংসদ সদস্য হয়েও দেশের উত্তাল পরিস্থিতি থেকে অনেক দূরে, পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে ব্যস্ত ছিলেন সাকিব। সেসময় এক প্রবাসী বাংলাদেশি তাকে প্রশ্ন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি কেন নীরব। সাকিব এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তার দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি দেশের জন্য কী করেছেন?’
প্রথমত কর্তৃত্ববাদী একটি দলের টিকিটে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং পরবর্তীতে দেশে যখন ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরছে-ঠিক সেসময় এমন নির্বিকার আর তাচ্ছিল্যময় প্রশ্ন করে সাকিব নিজেকে চূড়ান্ত ‘ভিলেন’ বানিয়ে দেন।
পরে ফেসবুকে বিশাল এক রচনা লিখে ক্ষমা চাইলেও তাতে ভ্রূক্ষেপ করেনি কেউ। সাধারণ মানুষ এখনো সাকিবের ওপর ক্ষুব্ধ। তাই তো অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের বিদায়ী টেস্ট সিরিজ দেশের মাটিতে খেলতে চেয়েও পারেননি সাকিব। তার দেশে ফেরার বিরুদ্ধে মিরপুরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে স্থানীয়রা। গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের হয়েছে। নিরাপত্তা শঙ্কায় শেষ মুহূর্তে তাকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে দেশে ফিরতে নিরুৎসাহিত করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এর আগেই অবশ্য ক্যারিয়ার নিয়ে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতে টেস্ট সিরিজ চলাকালে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব। ওয়ানডে থেকে অবসর না নিলেও অদূর ভবিষ্যতে তার দেশে ফেরা বা জাতীয় দলের হয়ে মাঠে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ বললেই চলে।
জাতীয় দল থেকে ব্রাত্য হওয়ার পর এখন বিদেশি লিগেও সাকিবের খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বছরের শেষদিকে এসে সাকিবের বোলিং অ্যাকশনকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। এর ফলে এখন বিদেশি লিগগুলোতেও বোলিং করতে পারছেন না এই বাঁহাতি স্পিনার।
সবমিলিয়ে ২০২৪ সালটা সাকিবের জন্য ভুলে যাওয়ার মতো। তবে ইতিহাস তাকে কখনো চব্বিশের স্মৃতি ভুলতে দেবে কিনা–এই প্রশ্নের জবাব আপাতত সময়ের কাছে তোলা থাক।