‘মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে’
জ্যোতির্ময় মন্ডল, সেন্ট ভিনসেন্ট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) থেকে
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ। টেস্ট সিরিজে এক জয়। ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ। টি ২০ সিরিজে প্রতিশোধ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করে সফল সফর শেষ করল বাংলাদেশ। টি ২০ সিরিজে দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় না থাকার পরও এই সাফল্যের জন্য সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে কৃতীত্ব দিচ্ছেন অনেকে। সালাহউদ্দিনের ধারণা, মানসিকতায় বড় পরিবর্তন হয়েছে ক্রিকেটারদের। সেই সঙ্গে স্বাধীনভাবে তাদের খেলতে দেওয়ায় বাংলাদেশ ভালো ফল পেয়েছে।
প্রশ্ন : প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল। দেশি কোচ হিসাবে প্রমাণের আর কিছু কি আছে?
সালাহউদ্দিন : আমার প্রমাণ করার কিছু নেই। আমার কাজ হলো ছেলেদের উন্নতি হচ্ছে কি না, ছেলেরা ঠিকমতো খেলছে কি না, কে কী ভাবল সেটা নিয়ে আমি ভাবি না। ছেলেদের উন্নতি আমার চোখে পড়ে। সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। মানুষের ভাবনা দিয়ে আমার কিছু হবে না।
প্রশ্ন : টি ২০ দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় আপনার হাত ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে এসেছেন। আপনাকে পেয়েই কি কাজটা সহজ হয়েছে?
সালাহউদ্দিন : মেহেদী হাসান, জাকের আলী কিংবা লিটন দাস হয়তো বিপিএল বা ঢাকা লিগে আমার অধীনে খেলেছে। এজন্য আমার কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে। তারা কখন কী করতে পারে, আমার ভালো জানা। মাঠের কাজ তাদেরই করতে হয়। আমাদের ছেলেরা স্কিলফুল। ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা ছিল খুবই ভালো। এটা পুরো দলের সাফল্য।
প্রশ্ন : টি ২০ ফরম্যাটে কি এমন হলো যে, মনে হচ্ছে সব কিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এই সাফল্যের পেছনে অনেকেই আপনার কথা বলছেন। আপনার ধারণা কি?
সালাহউদ্দিন : এখানে আমি কিছু করিনি। প্রধান কোচের অবদান রয়েছে। ফিল খেলোয়াড়দের স্বাধীনতা দেন। সেই সঙ্গে কোচিং স্টাফদের যে কাজ রয়েছে, সেগুলো নিয়েও স্বাধীনতা দেন। আমাদের সবার মতামত নেন। মানসিকতায় একটা বড় পরিবর্তন এসেছে।
প্রশ্ন : ক্রিকেটারদের মানসিকতার উন্নতির জন্য মনোবিদ রাখা হতো। কী এমন করলেন আপনারা যে তাদের মানসিকতায় এই পরিবর্তন হলো?
সালাহউদ্দিন : তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে। নিজেদেরকে আরেকটু বড় ভাবতে শুরু করেছে যে, তারা পারে। তাদের এই মানসিক উন্নতিই ভবিষ্যতে কাজে দেবে।
প্রশ্ন : সিরিজ শুরুর আগে কী ভাবনা ছিল? বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ছিলেন না।
সালাহউদ্দিন : এই সিরিজ শুরুর আগেই আমার কড়া কথা ছিল যে, আমরা কীভাবে এখান থেকে ভালো ফল নিয়ে যেতে পারি। টেস্টে আমরা ভালো করেছি। দ্বিতীয় ওয়ানডে ছাড়া আমরা পুরো সিরিজে ভালো খেলেছি। ওয়ানডেতে হয়তো একটুর জন্য ফল আসেনি। এছাড়া সিরিজে ইনজুরির কারণে প্রথম সারির তিনজন ছিল না। নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে শিখেছে।
প্রশ্ন : সবাই বলছে আপনি কোচ হওয়ায় জাকের আলী, শেখ মেহেদীরা সাহস নিয়ে খেলতে পারছেন...
সালাহউদ্দিন : জাকের ব্যাটার হিসাবে যথেষ্ট পরিণত। সে বুঝে ক্রিকেট খেলে। এটা যে কোনো পরিস্থিতিতেই দরকার। বাকি যারা আছে তারা হয়তো দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে খেলেছে, একটা কমফোর্ট জোন আছে। অন্য যে ছেলেরা আছে, তারাও আমার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আমি বলব, দলটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : আপনার পিতৃতুল্য আচরণে ছেলেরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন?
সালাহউদ্দিন : স্বাভাবিক। আমার কাছ থেকে স্নেহ তারা হয়তো একটু বেশি পেতেই পারে। এটা নতুন কিছু না। ছেলেরা যখন খারাপ খেলে ওদের পাশে বেশি থাকা উচিত। এটা কোচের জন্য জরুরি। কারণ ভালো যারা খেলে তাদের জন্য সবাই আছে।
প্রশ্ন : পুরো সিরিজে জাকের দারুণ ব্যাটিং করেছেন। আপনি তাকে বহুদিন ধরে চেনেন। অন্যদের থেকে তিনি কোন জায়গায় আলাদা?
সালাহউদ্দিন : জাকেরকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। সে স্কিলফুল। ঢাকা লিগ বলেন, বিপিএল বলেন, সে বিভিন্ন পজিশনে খেলে অভ্যস্ত। জানে কোন ভূমিকায় তাকে কীভাবে খেলতে হয়। এটা তার নিজস্ব যোগ্যতায় হয়েছে। সে জানে কখন কী করতে হবে। এই পরিপক্বতা হয়তো আমাদের অন্য ব্যাটারদের মধ্যেও আসবে। এই পরিপক্বতা যখন সবার মধ্যে আসবে, তখন আরও ভালো দল হব আমরা।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে প্রধান কোচ হতে রাজি আছেন?
সালাহউদ্দিন : এখন এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ আমি যে রোলে আছি, সেটা উপভোগ করছি। যদি ছেলেদের সহযোগিতা করতে পারি, আমার জন্য সেটাই যথেষ্ট। তাদের সামান্য উন্নতি হলে নিজেকে সফল ভাবব।