-6744009a57dae.jpg)
সংগৃহীত
‘ভাইকে (সাবেক কিংবদন্তি গোলকিপার মো. মহসিন) দেখি না তিন মাস হয়ে গেল। কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। কেউ আমার ভাইয়ের খোঁজ দিতে পারল না। আমি এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না’, ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন মো. মহসিনের ছোট বোন রুমা ফেরদৌস। তিনি যোগ করেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে কত স্মৃতি এখনো আমার চোখে ভেসে বেড়ায়। আল্লাহ যেন ভাইকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন। সেই দোয়াই করি।’
গত ২৬ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরেননি মো. মহসিন। পরিবার ও ফুটবলাঙ্গনের অনেকে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি এখন পর্যন্ত। মহসিনের ছোট ভাই কোহিনূর পিন্টু বলেন, ‘আমার বড় ভাই নেই তিন মাস। বাস-ট্রেনে পোস্টারিং করেছি। মতিঝিল, মগবাজারেও পোস্টার লাগানো হয়েছে। রমনা ও কমলাপুর থানায় জিডি করেছি। মিডিয়ায় নিখোঁজ সংবাদও হয়েছে। এরপরও ভাইকে পাচ্ছি না।’
মহসিন বাংলাদেশের তারকা ক্রীড়াবিদ। অনেক ভক্ত-সমর্থক রয়েছে তার। তবে দীর্ঘদিনের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় চেহারায় পরিবর্তন এসেছে অনেক। ফলে রাস্তাঘাটে কেউ দেখলেও সহজে চেনার পরিস্থিতি নেই। গত কয়েক বছর ধরে মহসিন শারীরিক ও মানসিক রোগে ভুগছিলেন। আগেও একবার নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। অবশ্য দুইদিন পরই খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। এবার তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ায় মহসিনের পরিবার উদ্বিগ্ন বলে জানান পিন্টু, ‘তার কাছে টাকাপয়সা, মোবাইল কিছু নেই। শরীরও অসুস্থ, এতদিন কোথায় কীভাবে আছে, ভাবলেই গা শিউরে উঠছে।’
বাংলাদেশ ফুটবলের সোনালি দিনের তারকা গোলকিপার মহসিন। খেলা ছাড়ার পর কানাডায় প্রবাসজীবন কাটিয়েছেন। সেখান থেকে ফিরে ঢাকায় বসবাস করছেন ২০১৪ সাল থেকে। ৬১ বছর বয়সি মহসিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
অসুস্থ মহসিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসায় এসে পড়েন। মহসিনের বন্ধুরাও হাল ছেড়ে দেন একপর্যায়ে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সেরা গোলকিপারের আলোচনায় সান্টু-মহসিন-আমিনুলের নাম প্রায় সমানভাবে উচ্চারিত হয়। গোলের খেলা ফুটবলে গোলকিপার হয়েও আশি-নব্বইয়ের দশকে অনেক বড় তারকা ছিলেন মহসিন।
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মহসিনের ১৯৮২ এশিয়ান গেমস থেকে উত্থান। এরপর প্রায় এক যুগ বাংলাদেশ দলের এক নম্বর গোলকিপার ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের পাশাপাশি দেশের দুই জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনী এবং মোহামেডানেও খেলেছেন দীর্ঘদিন। দুই বড় ক্লাবের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রেরও অধিনায়কত্ব করেছেন মহসিন।
মানসিকভাবে অসুস্থ থাকলেও বড় তিন ক্লাবে অধিনায়কত্বের গৌরবের বিষয়টি তিনি স্মরণ করতে পারতেন। একজন কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ এভাবে নিখোঁজ হয়ে গেলেন। কোথায় আছেন, কেউ জানে না।