সাকিব আল হাসান
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে আজ রাতে দেশে ফেরার কথা বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলাদেশকে বিশ্ব মঞ্চে গর্বের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করা সাকিব দেশে ফিরবেন তার শেষ টেস্ট খেলতে; অথচ তাকে ঘিরে নেই কোনো সাজসাজ রব; নেই সাকিবকে বিদায়ী টেস্টে সংবর্ধনা দেওয়ার কোনো বিশেষ প্রস্তুতি। বরং সাকিব দেশে ফিরলে বিসিবি তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারবে কিনা সেটি নিয়েই এখন যত চিন্তা।
সাকিবকে নিয়ে এমন চিন্তার কারণ তিনি নিজেই। বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করা সাকিব কখন যে নামতে নামতে অতল গহ্বরে চলে গেছেন সেটা তিনি নিজেও জানেন না। রাজনীতিতে জড়িয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন সাকিব। তার চেয়ে বড় সর্বনাশ করেছেন দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন না জানিয়ে। চুপ থাকলেও হয়তো পার পেতে পারতেন সাকিব। তবে তিনি তা করেননি বরং দর্শকের প্রশ্নের মুখে পড়ে ওই দর্শককেই পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন, ‘দেশের জন্য তার অবদান কি?’
এতোটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি সাকিব। দেশে যখন ছাত্র-জনতাকে পাখির মতো গুলি করে মারা হচ্ছে, সাকিবের ৭৫ জার্সি গায়ে দেওয়া কিশোরকে আন্দোলনে নামায় দড়ি দিয়ে বেঁধে থানায় নেওয়া হচ্ছে তখন নীরব ছিলেন সাকিব। যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিবের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে হাজার হাজার সাকিব ভক্তরা তখন যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রী ও সন্তানের নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছেন নৌকায় নির্বাচন করা সাকিব। পারিবারিক সেই ছবিগুলো সে সময় স্বগর্ভে পোস্টও করেছে তার স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির।
সাকিবের এমন কাজ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি রাস্তায় রক্তাক্ত হওয়া সেই ভক্তরা। সাকিব তাই এখন নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ক্ষমা চাইলেও তা মেনে নিতে পারছে না তার ভক্তরা। সাকিবকে দেশে ফিরতে না দিতে মিরপুরে স্টেডিয়ামজুড়ে দেয়াল লিখন হয়েছে। সাকিবকে খেলতে না দেওয়ার পক্ষে অবস্থান করে হচ্ছে আন্দোলন। যেই আন্দোলনে দেওয়া হচ্ছে সাকিববিরোধী নানা স্লোগান। ছাত্র-আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাকিবের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।
সাকিবের দেশে ফেরার দিন বৃহস্পতিবার মিরপুরে বিসিবিতে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। সাকিব বিরোধীদের অবস্থান যখন ক্রমেই শক্ত হচ্ছে, তখন দুবাইয়ে থাকা সাকিবকে বিসিবির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়েছে। যেখানে সিদ্ধান্ত হবে সাকিব দেশে ফিরবেন কিনা।
সাকিবের দেশে ফেরা নিয়েও অবশ্য আছে স্বার্থ। দেশের মাটিতে সাকিব তার ক্যারিয়ার শেষ করতে চান; বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় যেই সাকিব তিনি হয়েছেন, শেষবারের মতো সেই মানুষের সামনে দাঁড়াতে চান তিনি। এসব যত যাই বলুন না কেন তিনি; এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কারণ।
আসল কারণটা তিনি আসন্ন বিপিএলে খেলতে চান। তার আগে দেশের পরিস্থিতি বুঝতে চান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অর্জনকে কাজে লাগিয়ে আবেগ তৈরি করে বিসিবি ও সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিয়ে ছাড়পত্র চান। যাতে দেশে ফেরা নয়; দেশ ত্যাগে কোনো বাধার মুখে পড়তে না হয় তাকে। তার দলের অন্য নেতাকর্মীদের মতো শিকার না হতে হয় গ্রেফতারের। আর সেটি নিশ্চিত হলে আগামীতে দেশের মাটিতে ওয়ানডে ও আসন্ন বিপিএলেও যে তেমন কোনো সমস্যা হবে না সেটা বুঝতে পারে সবাই। সাকিবের ভাবনায় এখন তেমনটিই। আর তখন দেশে বিজ্ঞাপনেও আগের মতো সরব হতে পারেন তিনি।
তবে এসবের মধ্যে সাকিব বুঝতে পারছেন না যে নটে গাছটি মুড়িয়ে গেছে। সাকিবকে নিয়ে যেই আবেগ ছিল তার ভক্তদের মধ্যে; সেই আবেগের ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই এখন আর। সাকিব আল হাসান এখন তাই বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে কেবল-ই এক আক্ষেপ ও হাহাকারের নাম।
অনেকটা তারাপদ রায়ের কবিতার লাইনের মতো- আমরা যে গাছটিকে কৃষ্ণচূড়া ভেবেছিলাম, যার উদ্দেশে ধ্রূপদী বিন্যাসে কয়েক অনুচ্ছেদ প্রশস্তি লিখেছিলাম; গতকাল বলাইবাবু বললেন, ‘ঐটি বানরলাঠি গাছ।’