Logo
Logo
×

খেলা

সেদিন নাসুমের সঙ্গে যা ঘটেছিল হাথুরুর

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম

সেদিন নাসুমের সঙ্গে যা ঘটেছিল হাথুরুর

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের জাতীয় দলের হেডকোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের যুগের অবসান হতে চলেছে। ইতোমধ্যে বিসিবিপ্রধান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমনটিই জানিয়েছেন। হেডকোচ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পেছনে দুটি কারণ জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুটি। এক. জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে লাঞ্ছিত করা। দুই. শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বিসিবির সঙ্গে করা চুক্তির বরখেলাপ। মূলত এই দুটি কারণ। পাশাপাশি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে বিসিবি।

গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর)  বিকালে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানালেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। তবে ওই ইস্যুতে অন্তত তিনটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে একবারও হাথুরুর হাতে লাঞ্ছিত ওই ক্রিকেটারের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

একবারের জন্যও বলেননি ‘অমুক’ ক্রিকেটারকে লাঞ্ছিত করেছেন হাথুরু। এদিকে মঙ্গলবার বিকালে বিসিবি সভাপতির এমন ঘোষণার পর অনেকের মনেই কৌতূহলী প্রশ্ন— কে সেই লাঞ্ছিত ক্রিকেটার?

সেই কৌতূহলীদের জন্য জবাব— হাথুরুর কাছে লাঞ্ছিত সেই ক্রিকেটার হলেন নাসুম আহমেদ। যাকে ২০২৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় হাথুরু শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। দিনটি ছিল গত বছরের ১৩ অক্টোবর। ভারতের চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের সময়ের ঘটনা ছিল সেটি। ওই ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসর কাভার করতে যাওয়া একাধিক বাংলাদেশি সাংবাদিকের ভাষ্য— ওই ম্যাচে নাসুম একাদশে ছিলেন না। তিনি ছিলেন দ্বাদশ খেলোয়াড়।

ম্যাচের বিভিন্ন সময় সহযোগীদের পানি পান করানো, ঘাম মোছার জন্য টাওয়েল নিয়ে কিংবা গ্লাভস বদলের কাজে মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশের দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ ব্যক্তিকে মাঠে পাঠানো হয়। কখনো কখনো ওই পানি পান করানো, গ্লাভস বদল কিংবা তোয়ালে দিয়ে ঘাম মোছার অজুহাতে মাঠে ঢোকা ওই অতিরিক্ত সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন বার্তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাঠাচ্ছিলেন বাংলাদেশ কোচ হাথুরুসিংহে। সেই কাজের একপর্যায়ে নাসুম আহমেদকে কোন অজুহাতে মাঠে ঢুকে ক্রিকেটারদের একটি বার্তা পৌঁছে দিতে বলেন বাংলাদেশের কোচ হাথুরুসিংহে। নাসুম আহমেদ হয়তো শোনেননি কিংবা বোঝেননি। তার মাঠে যেতে বিলম্ব হয়। এতে করে হাথুরু ক্ষিপ্ত হয়ে নাসুমের ঘাড়ে ও কাঁধে আঘাত করেন।

এই আঘাতের ধরন নিয়ে অবশ্য দুই রকম ভাষ্য আছে। একপক্ষের দাবি— নাসুমের মাঠে ঢুকতে দেরি হওয়ায় হাথুরুর বার্তা মাঠে পৌঁছাতেও বিলম্ব হয়। তাতে করে মেজাজ বিগড়ে যায় বাংলাদেশ কোচের। তিনি সপাটে নাসুমের ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে মাঠে যেতে বলেন এবং কান ও ঘাড়ের আশপাশে হাত দিয়ে আঘাত করেন। 

আবার অন্যপক্ষের বক্তব্য—হাথুরু নাসুমকে সেভাবে আঘাত হানেননি। শুধু ঘাড় ও কাঁধের ওখানে গুঁতো দিয়েছিলেন। 

তিনি কোচ বা প্রশিক্ষক হিসেবে তার অধীনস্ত ক্রিকেটারদের মুখে যা খুশি বলতে পারেন, কারও ভুলত্রুটি আর ব্যর্থতা এবং না পারা নিয়ে কঠিন ও তীর্যক ভাষায় সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু গায়ের হাত তোলার অধিকার নেই কোনো কোচের।

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও গতকাল সে কথাই বলেছেন। তার বক্তব্য— ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, কোনো কোচ তো কোনো ক্রিকেটারের গায়ে হাত তুলতে পারেন না। এটা গর্হিত অন্যায়। কাজেই হাথুরু সেই অন্যায়ের শাস্তিই পেলেন।

বিসিবিপ্রধান বোঝানোর চেষ্টা করেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হুট করে একটা ঘটনা ঘটতেই পারে; কিন্তু জাতীয় দলের কোনো ক্রিকেটারকে একজন কোচ কোনোভাবেই লাঞ্ছিত করতে পারেন না।

নাসুম আহমেদের নাম প্রকাশ না করে ফারুক আহমেদ বলেন, আপনি জানেন— এটি পার্টিকুলার ওই ছেলের জন্য খুবই বাজে একটা ঘটনা। মনে হয়েছে যে এটা আসলে কিছু একটা হলে ভালো হয়। খুব ভালোভাবে বোঝেন, সে ন্যাশন্যাল টিমের প্লেয়ার।’

 ‘উই আর হিউম্যান বিং। আমি ডিফেন্ড করতে চাচ্ছি না। হিট অ্যাট দ্য মোমেন্ট একটা জিনিস হতে পারে। বাট ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট আসলে কোনো পর্যায়ে কোনোভাবে একটা ন্যাশন্যাল প্লেয়ারকে আপনি করতে পারেন না’ বলে জানান বিসিবিপ্রধান।

তিনি বলেন, হাথুরুকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি ওই অন্যায় আচরণের শাস্তি বলেই অভিহিত করেন তিনি। এটার শাস্তি ওই আরকি। তিনি বলেন, ওইটাই হওয়া উচিত ছিল আজ থেকে আগে যেটা হলো।

উল্লেখ্য, প্রথম দফায় ২০১৭ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়েন হেডকোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের একটা সফরের মাঝপথে ই–মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অথচ কথা ছিল— ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনিই কোচ থাকবেন। ওভাবে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়াটা পেশাদারত্বের সঙ্গে মোটেই সংগতিপূর্ণ ছিল না বলে ক্রিকেটবোদ্ধারা মনে করেন। কিন্তু ক্রিকেট নাকি সবকিছু্ই ফিরিয়ে দেয়— হাথুরুসিংহেকেও কি তা–ই দিল। 

দ্বিতীয় দফায় আবার ফিরে আসেন ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। এবারের শুরুটা ভালো ছিল। ওয়ানডে সিরিজে হারলেও সেই সময়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করে বাংলাদেশ।

যাই হোক, বাংলাদেশের কোচের পদ ছেড়ে দেওয়ার মেইলটা পাঠিয়েছিলেন এক অক্টোবরে। আরেক অক্টোবরে সেই একই পদ থেকে অপমানজনক বিদায়ের বার্তাটাও পেলেন আরেকটি মেইলে। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের মাঝপথে, এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের ঠিক আগে। এটাকে চক্রপূরণ বলবেনই বা না কেন। আর এর পেছনের মূল কারণই নাকি ছিল নাসুম আহমেদ।

ইতিহাস জানাচ্ছে, বছর পূর্ণ না হতেই সেই অন্যায়ের শাস্তি পেলেন হেডকোচ। তাকে কোচের পদ থেকে সাসপেন্ডের পাশাপাশি শোকজ করল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সেই সঙ্গে বরখাস্তের বিষয়টিও নিশ্চিত করে দিলেন সভাপতি। শুধু তাই নয়, পরিবর্তিত কোচও নিয়োগ দিয়ে ফেলেছে বিসিবি। ওয়েস্টিইন্ডিজের ফিল সিমন্স। তিনি বর্তমানে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম