সাকিব নয়, মাহমুদউল্লাহর মতো পরবর্তী ‘সেফটি নেট’ হচ্ছেন মিরাজ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম
গতকাল বুধবার ছিল ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। এ ম্যাচে ৮৬ রানে হেরে সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। অন্যদিকে মাহমুদউল্লাহও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ১২ অক্টোবর শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবেন এ সাইল্যান্ট কিলার। তাদের বিকল্প নিয়েই এর মধ্যে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।
বর্তমানের স্পিনাররা ভারতের বিষেণ সিং বেদির মতো ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটারে বোলিং করেন না, স্পিনারদের এখন হরহামেশা ৯০ কিলোমিটারে বল করতে দেখতে পাবেন। ওই গতিতেই কিছুটা বাঁক, কিছুটা অ্যাঙ্গেল, কিছুটা বৈচিত্র্য যোগ করে ব্যাটের মাঝখান থেকে দূরে থাকার চেষ্টার নামই আধুনিক টি-টোয়েন্টি বোলিং।
বাংলাদেশ দলে এ ধরনের স্পিন বোলিংটা করে থাকেন শেখ মেহেদী হাসান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করা স্পিনারদের মধ্যে মেহেদীর নামটা ওপরের দিকেই থাকবে। ডানহাতি কিংবা বাঁহাতি—ব্যাটসম্যান যেমনই হোক, এমন বৈচিত্র্যময় অফ স্পিন বোলিংটা করে থাকেন তিনি। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজ এক বছরের বেশি সময় পর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরায় মেহেদীকে একাদশে জায়গা ছাড়তে হচ্ছে। দুজনেরই প্রোফাইলে ‘অফ স্পিনার’ লেখা খুঁজে পাবেন। কিন্তু শেখ মেহেদীর সঙ্গে মিরাজের টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ে বিরাট পার্থক্য। মেহেদী বল হাতে যা করেন, তাকে অফ স্পিন বলার চেয়ে শুধু ‘বোলিং’ বলা শ্রেয়। কারণ ব্যাটসম্যানের পায়ের কাজ দেখে শেষ মুহূর্তে একটা ইয়র্কারও মেরে দিতে পারেন মেহেদী।
মিরাজের সে দক্ষতা নেই তা নয়। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে উন্নতি করা ক্রিকেটার মিরাজই। কিন্তু মিরাজের সাফল্য এসেছে মূলত টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে। ছোট্ট সংস্করণের ক্রিকেটে তিনি কখনই দলে জায়গা পাকা করতে পারেননি। শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে খেললে হয়তো টি-টোয়েন্টির মারদাঙ্গা ক্রিকেটের মানানসই বোলিংয়ের দক্ষতাটাও মিরাজ এত দিনে রপ্ত করে ফেলতেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি দলে একজন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের অভাবটা মেহেদীই পূরণ করে এসেছেন। তাই মিরাজের দরকার হয়নি। মেহেদী এখনো আছেন। কিন্তু হুট করে ভারতের মতো দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডাক পাওয়ায় মিরাজের টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ের দুর্বলতাগুলো বাজেভাবে সামনে আসছে। শুধু কি বোলিং? ব্যাটিং দক্ষতায় শেখ মেহেদীর চেয়ে মিরাজ এগিয়ে থাকলেও সেটা টি-টোয়েন্টিসুলভ নয়। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের চূড়ান্ত চাপের মুহূর্তে মিরাজের ব্যাট বহুবার বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত করেছে, নিয়ে গেছে দাপুটে অবস্থানে। হার না মানার প্রচণ্ড শক্তিশালী মানসিকতার সঙ্গে দারুণ ডিফেন্সিভ টেকনিক মিরাজের টেস্ট, ওয়ানডের সাফল্যের ভিত। প্রতিপক্ষ দলের সেরা বোলারের সেরা বলটাকে ঠেকিয়ে দেওয়ায় দারুণ দক্ষ তিনি।
কিন্তু ২০ ওভারের খেলায় সেই ভালো বলেই ছক্কা মারতে হয়। মিরাজের ব্যাটিং দক্ষতা সেখানে ‘সীমিত’। অথচ ভারত সফরের টি-টোয়েন্টি সফরের দলে মিরাজকে সুযোগ দেওয়ার ব্যাখ্যায় তাকে সাকিব আল হাসানের বিকল্প হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। অধিনায়ক অবশ্য এ কথাও বলেছেন, এখনই সাকিব না থাকায় সৃষ্টি হওয়া বিশাল শূন্যতা পূরণ করবেন মিরাজ, তা ভাবা ঠিক হবে না। মিরাজকে ৮ থেকে ১০টি ম্যাচ দিতে হবে। কিন্তু মিরাজ কি আসলেই সাকিবের বিকল্প হিসেবে খেলছেন?
ব্যাটিংয়ের ধরন বলে তাকে খেলানো হচ্ছে মাহমুদউল্লাহর বিকল্প হিসেবে। চাপের মুখে জুটি গড়ে দলের মানরক্ষার কাজটা মাহমুদউল্লাহ করে এসেছেন বছরের পর বছর। হায়দরাবাদে ভারত সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়া এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছিলেন বাংলাদেশের ‘সেফটি নেট’।
দলের জয়–পরাজয় পরে, টপ অর্ডারের নিয়মিত ধসের পর বাংলাদেশের রানটাকে একটু ভদ্রস্থ জায়গায় নেওয়ার কাজটা মাহমুদউল্লাহ করে এসেছেন সফলভাবে। গতকাল যেমন তিনি ৩৯ বলে ৪১ রান করেছেন, বাংলাদেশের রান গেছে ১৩০-এর ঘরে। কিন্তু দল হেরেছে ৮৬ রানে। তার ইনিংসটি বাদ দিলে বাংলাদেশের একশ রান করতেও কষ্ট হতো।
মান বাঁচানোর এই একই লড়াই গোয়ালিয়রে লড়েছেন মিরাজ। আগের ম্যাচে মেহেদী ৩৫ রানে অপরাজিত থেকে দলের রানটাকে ১২০-এর ঘরে নিয়ে যান। যা দলের জয়–পরাজয়ে কোনো ভূমিকা রাখেনি, শুধু মান বাঁচিয়েছে। ব্যাটিংয়ে বড় পরিবর্তন না এলে টি-টোয়েন্টিতে মিরাজকে এ ভূমিকাতেই দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, সাকিব নয়, অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহর মতো মিরাজও হচ্ছেন পরবর্তী বাংলাদেশের ‘সেফটি নেট’।