Logo
Logo
×

খেলা

চরম অনিশ্চয়তার দোলাচল থেকে আকাশ ছোঁয়ার গল্প

Icon

হোসাইন মাহমুদ আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম

চরম অনিশ্চয়তার দোলাচল থেকে আকাশ ছোঁয়ার গল্প

পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বিজয়োল্লাস। ছবি: সংগৃহীত

আগস্ট মাসের শুরুর দিককার কথা ভাবুন। উত্তাল বাংলাদেশ। শহর-বন্দরে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণজাগরণের কাল। রাজপথ লোকে-লোকারণ্য, রক্তে রঞ্জিত। ঠিক সে সময়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ সামনে রেখে অনুশীলন শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রমত্ততায় সে অনুশীলন স্থগিত করতে হয় দলকে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বোর্ডের পরিচালকরা রাতারাতি গা ঢাকা দেন। মুহূর্তেই অভিভাবকশুন্য হয়ে পড়ে দেশের ক্রিকেট অঙ্গন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ–যা কিনা আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ, এর ঠিক আগে ক্রিকেটাররা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন। সে সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। নির্ধারিত সময়ের চারদিন আগেই তারা বাংলাদেশ দলকে পাকিস্তানের যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। লাহোরে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের জন্য অনুশীলনের সুব্যবস্থা করে। এতে ক্রিকেটাররাও দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি পেছনে ফেলে নির্বিঘ্নে অনুশীলনের সুযোগ পায়।

টাইগারদের অভিনন্দন জানালেন রাষ্ট্রপতি

দেশের এমন ক্রান্তিকালে কিছু করে দেখানোর সংকল্প বুকে ২১ আগস্ট রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে  মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। ঘরের মাঠে উদ্দীপ্ত পাকিস্তান প্রথম ইনিংসেই রানের পাহাড় গড়ে। বাংলাদেশের বোলারদের শাসন করে সেঞ্চুরি তুলে নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং সৌদ শাকিল।

প্রায় দেড় দিনেরও বেশি সময় ফিল্ডিং করে বাংলাদেশ যখন ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায়, মাথার ওপর তখন বোঝা হয়ে চেপে আছে পাকিস্তানের ৪৪৮ রান। সাদমান ইসলাম প্রায় আড়াই বছর পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ৯৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে চাপ কমানোর কাজ করেন।

এই টেস্টে মাঠে নামার আগে চোট শঙ্কায় থাকা অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম খেলেন ১৯১ রানের ইতিহাসগড়া এক ইনিংস। লিটন দাসের ৫৬ আর মেহেদী হাসান মিরাজের ৭৭ রান সঙ্গে যোগ হলে পাকিস্তানের ৪৪৮ টপকে ৫৬৫ রান পর্যন্ত পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের এমন ‘অচেনা’ প্রতি আক্রমণ দেখে সেই যে লাইনচ্যুত হয় পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস, তা আর ফিরিয়ে আনতে পারেনি শান মাসুদের দল। দ্বিতীয় ইনিংসে পেস সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের দুই স্পিনার মিরাজ-সাকিবের ঘূর্ণিতে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।

জুলাই বিপ্লবের সুফল পাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গন, পাকিস্তানকে হারানোর পর আসিফ মাহমুদ

পঞ্চম দিনে বিনা উইকেটে ৩০ রান তুলে ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ১৩ টেস্টে যেখানে ১২ হার ও ১ ড্র ছিল, সেখানে পাকিস্তানের মাটিতে এমন জয়ে শান্তদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে চলে যায়।

সে আত্মবিশ্বাসের ভেলায় চড়ে এবার সিরিজ জয়ের লক্ষ্য স্থির করে বাংলাদেশ দল। একই মাঠে খেলা, কিছুটা হলেও সখ্য হয়েছে কন্ডিশনের সঙ্গে। ম্যাচের আগে চোট নিয়ে শরিফুল ইসলাম ছিটকে গেলে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ, তবে তাসকিন আহমেদকে দীর্ঘ সময় পর সাদা পোশাকে পাওয়ার উচ্ছ্বাসও ছিল।

অন্যদিকে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের কাছে টেস্ট হারের পর পাকিস্তান দলে শুরু হয় হাজার বছরের পুরোনো সেই ‘গৃহদাহ’। এমনটা যখন হয়, তখন প্রতিপক্ষ আরও চেপে বসার সুযোগ পায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপে সে সুযোগটা নিয়েছেন।

এবার প্রথম ইনিংসেই পাকিস্তানকে চেপে ধরেছেন। হাত খুলে খেলার সুযোগ পাননি পাকিস্তানের ব্যাটাররা। তাসকিন আহমেদ গতি দিয়ে ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ শুরু করেন, আঙুলের জাদুতে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে সে মিশনকে পূর্ণতা দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৭২ রানে থামতে হয় পাকিস্তানকে।

সিরিজ সেরা মিরাজ, পুরস্কারের অর্থ দেবেন নিহত রিকশাচালককে

জবাব দিতে নেমে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে অকুল পাথারে পড়ে দল। ঠিক সে সময় দলের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন বাজে ফর্মের কারণে হরহামেশাই ক্রিকেট অনুরাগীদের রোষানলে পড়া লিটন দাস। ১৩৮ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংসে খাদের কিনারা টেনে তোলেন দলকে। বল হাতে ৫ উইকেট নেওয়া মিরাজ ব্যাটিংয়ে ৭৮ রান করে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন।

সপ্তম উইকেটে লিটন-মিরাজের ১৬৫ রানের রেকর্ড জুটিতে ২৬২ পর্যন্ত পৌঁছায় বাংলাদেশ। ৯০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের লিড নেওয়া ঠেকান পাকিস্তানের পেসার খুররম শাহজাদ।

তবে ১২ রানের লিড পেয়ে বড় কিছু করতে পারেনি পাকিস্তান। এবার হাসান মাহমুদ-নাহিদ রানার আগুনে বোলিংয়ে ১৭২ রানে সব উইকেট খুইয়ে বসে তারা। পাঁচ উইকেট যায় হাসানের ঝুলিতে, চার উইকেট পান ‘চাঁপাই এক্সপ্রেস’ নাহিদ রানা। অন্য উইকেট শিকার করেন তাসকিন।

ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮৫ রান। টেস্টের শেষ দিনে ৬ উইকেট হাতে রেখে দাপটের সঙ্গেই লক্ষ্য পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। চরম অনিশ্চয়তার দোলাচল সঙ্গী করে যে সিরিজে খেলতে নেমেছিল টাইগাররা, তার শেষটা হয়েছে আকাশ ছোঁয়ার গল্প দিয়ে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম