ছবি: সংগৃহীত
রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ জয় নিয়ে ঘরের ফেরার পালা। ৩০ আগস্ট সেই ম্যাচ সামনেই রেখেই এখন প্রস্তুত হবে বাংলাদেশ দল। তবে সেই টেস্টে দলের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব খেলবেন কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। আর এমন সংশয়ের কারণ সাকিবের বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলা।
গত ২১ আগস্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে মাঠে নামার পর; ২২ আগস্ট সাকিবকে পোশাক শ্রমিক রুবেলকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি করে ডিএমপির আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। সাকিবকে মামলার ২৮ নম্বর এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে। যেখানে সাকিব ছাড়াও আসামি করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ১৫৬ জনকে। একই মামলায় অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়।
এরপর ২৪ আগস্ট সাকিবকে দল থেকে বাদ দিতে ও দেশে ফিরিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বিসিবিকে লিগ্যাল নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম। যার প্রেক্ষিতেই এখন সাকিব ইস্যুতে মাথা ঘামাতে হচ্ছে বিসিবিকে। হত্যা মামলার আসামি এমন প্রকাশ্যে দেশের হয়ে খেলতে পারেন কিনা সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে, যা নিয়ে বিসিবি অবশ্য জানিয়েছে, এ ব্যাপারে প্রথম টেস্ট শেষে আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
বিসিবির নতুন বোর্ডপ্রধান ফারুক আহমেদ সাকিব ইস্যুতে বলেন, ‘আপনারা জানেন একটা মামলা হয়েছে। আইনি নোটিশ এখনো পাইনি আমরা। ওটার ব্যাপারে বলতে পারব না। এফআইআর হয়েছে। এর পরে তদন্ত হবে। এ মুহূর্তে প্রথম টেস্ট চলছে। রবিবার টেস্টের পঞ্চম দিন। এ মুহূর্তে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তাভাবনা করিনি। কালকের ম্যাচ শেষ হলে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব।’ অর্থাৎ প্রথম টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন সাকিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি।
এ ব্যাপারে সাকিব অবশ্য সমর্থন পাচ্ছেন তার সতীর্থদের কাছ থেকে। কেননা গত ৫ আগস্ট আদাবরে পোশাক কারখানার কর্মী মো. রুবেল যখন গুলিবিদ্ধ হন ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান, তখন দেশেই ছিলেন না সাকিব। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। সাকিবকে নিয়ে তাই সতীর্থদের দাবি, সাকিবের ওপর মিথ্যা মামলা উঠিয়ে নেওয়া হোক। সাকিবকে সমর্থন দিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার।
স্বাভাবিকভাবেই তাই সাকিব ইস্যুতে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বিসিবিকে। একদিকে সাকিবকে দেশে ফেরানোর আইনি নোটিশ, অন্যদিকে দলের ক্রিকেটারদের সাকিবের প্রতি জোরালো সমর্থন— সব মিলিয়ে জটিল পরিস্থিতি। সাকিব ইস্যুতে ঠিক কি সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি, তা জানার অপেক্ষায় এখন অনেকেই। এদিকে সাকিব যে দ্বিতীয় টেস্টেও থাকছেন তার একটা আভাস দিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
প্রথম টেস্ট জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব ইস্যুতে শান্ত বলেন, ‘যতটুকু বুঝি, (সাকিব) যখন দেশের হয়ে নামেন, তখন অনেক নিবেদিত একজন মানুষ তিনি। দলের জয়ের জন্য যা যা করা দরকার—ব্যক্তিগত জীবন একদিকে সরিয়ে রেখে দলের জন্য কীভাবে ভালো করতে পারেন, সেদিকে ফোকাস করা, দলের জুনিয়র একজনকে আলাদা করে সহায়তা করা—এগুলো আলাদা করে করতে পারেন। তিনি খুবই নিবেদিত একজন। সামনের ম্যাচে আরও বেশি আশা করছি তার থেকে।’ অর্থাৎ শান্তর কথায় পরিষ্কার তিনি অন্তত দ্বিতীয় টেস্টেও দেখছেন সাকিবকে।
আর তাছাড়া সাকিবের পারফরম্যান্সও কথা বলছে তার পক্ষেই। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট ও ১৫ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব, যা বাংলাদেশের জয়ে দারুণভাবে অবদান রেখেছে। এমন একজনের সার্ভিস তাই পেতেই চাইবে যে কোনো দল। তা ছাড়া সাকিব সমর্থন পাচ্ছেন দলের বাকি ক্রিকেটারদের। তাই সাকিবের ব্যাপারে বিসিবির নমনীয় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে বল যেহেতু এখন বিসিবির কোর্টে, তাই শেষ সিদ্ধান্তটা না আসা পর্যন্ত সেদিকে চোখ তো রাখতেই হচ্ছে।