যুদ্ধের ভয়াবহতায় গাজা ছেড়ে মিশরে, শুনুন ফিলিস্তিনি কারাতে চ্যাম্পিয়নের অদম্য গল্প
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম
মাইস আলবোস্তামি। ছবি-সংগৃহীত
নিজদেশে খেলাধুলা তো দূরের কথা, নিশ্চয়তা নেই স্বাভাবিক জীবনেরও। গোলাবারুদের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ আর ক্ষুধার তীব্রতা ছাড়া আর কী আছে গাজার আকাশে। তাই বলে তো আর অদম্য ইচ্ছে থেমে থাকে না। পাশের দেশ মিশরে পালিয়ে এসে দেশের পতাকার উড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ফিলিস্তানি কারাতে চ্যাম্পিয়ন মাইস আলবোস্তামি।
রোববার এক প্রতিবেদনে ১৮ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি এই কারাতের বিস্ময়কর গল্প তুলে এনেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে মাইস ও তার পরিবার পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মিশরে। সেখানে তার সঙ্গে কথা বলেছে এএফপি।
মাইস বলেন, ‘বোমাবর্ষণে নারকীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। বারবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাতে বাধ্য হই আমরা। প্রতিটি ঘণ্টাকে একেক বছরের মতো মনে হচ্ছিল।
‘প্রথম ১০ দিনেই আমি আমার কোচ জামাল আল-খাইরিকে হারাই। তার নাতনিও নিহত হন। সে আমার সঙ্গে কারাতে প্রশিক্ষণে অংশ নিতো’।
ফিলিস্তিনি জাতীয় কারাতে কোচ হাসান আল-রাইয়ি গাজায় আটকা পড়লে মিসরের জাতীয় দলের সঙ্গে মাইসের যোগাযোগ করিয়ে দেয়। পরে গাজা থেকে নাটকীয়ভাবে বের হতে সক্ষম হয় মাইস এবং তার পরিবার।
দেশ ছাড়লেও নিজের লালিত স্বপ্নের পথ ছাড়েননি মাইস। ইহুদিবাদী ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় যারা প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের জন্য বিশ্বমঞ্চে ফিলিস্তিনির পতাকা তুলে ধরতে চান মাইস। দেশের মানুষের দাবি বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করার অদম্য ইচ্ছে তার কন্ঠে।
মাইস আরো বলেন, ‘মিসরে আমার কোচরা আমাকে সন্তানের মতো দেখেন। তারা আমাকে পরবর্তী চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে তুলছেন’।
‘ফিলিস্তিনিদের আশা-প্রত্যাশার কথা সবার নজরে আনার জন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব। যখনই আমি কোনো চ্যাম্পিয়নশিপে যাব, আমি ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করব। এটা আমার দেশের জন্য, ফিলিস্তিনি শহিদ ও আহতদের জন্য আমার সংগ্রাম।’
মিশরে অভিভূত সাড়া পেয়েছেন মাইস। দেশটির কারাতে কোচ মামদুহ সালেম জানিয়েছেন, মাইসের মাঝে ‘অপার সম্ভাবনা, অঙ্গীকার ও ধারাবাহিকতা’ দেখতে পাচ্ছেন তিনি। নিষ্ঠুর বর্বরতা দেখে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়ার সুতীব্র ইচ্ছা বহু মানুষের। মিশরের কোচ নিজের আকাঙ্খা পূর্ণ করতে চান মাইসকে তার স্বপ্নের পথে এগিয়ে দিয়ে।
‘আমরা তার কৌশলকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু পরিশেষে কারাতে প্রতিযোগিতায় প্রতিভার চেয়ে দক্ষতা ও পরিশ্রম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি মাইস ভালো করবে’।
‘আমরা গাজায় ওদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে পারছি না। অন্তত তাদেরকে দেশের বাইরে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সহায়তা করতে পারি’।