ছবি: সংগৃহীত
ইউরোর টিকিট হাতে পাওয়াটাই জর্জিয়ার কাছে ছিল সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো। কেননা, ইউরোতে খেলা বাকি দলগুলোর মধ্যে তাদের র্যাঙ্কিংই (৭৪) সবচেয়ে পিছিয়ে। এবার আরও এক অঘটনের জন্ম দিয়েছে জর্জিয়া। লিখেছে নতুন এক ইতিহাস। প্রথমবারের মতো ইউরোতে খেলতে নেমেই রোনালদোর পর্তুগালকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে দলটি। জায়গা করে নিয়েছে শেষ ষোলোতে। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে যা শ্রেষ্ঠ অর্জন জর্জিয়ার।
এমন জয়ে বড় ভূমিকা আছে খিচা কাভারাস্কেইয়ার। ডিয়েগো ম্যারাডোনোর ক্লাব নাপোলিকে তিন দশক পর শিরোপা জেতাতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন কাভারাস্কেইয়া। সেই থেকে তার নামটা পরিণত হয়েছে ‘কাভারাডোনা’ বা ‘নতুন ম্যারাডোনা’ হিসেবে। সেই তিনিই আজ সর্বনাশটা করলেন পর্তুগালের।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটি কিছু বুঝে উঠার আগেই গিওর্গে মিকাওতাদজের পাস ধরে পর্তুগালের জালে বল জড়িয়ে জর্জিয়াকে এগিয়ে নেন নতুন ম্যারাডোনা। পিছিয়ে পড়ে রোনালদোর দল। ম্যাচে ফিরতে চেষ্টা চালায় বেশ। তবে তাদের সেই চেষ্টা বেশ দক্ষতার সঙ্গেই রুখে দিয়েছে জর্জিয়ার রক্ষণ।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধেও ব্যবধানটা দ্বিগুণ করে নেয় জর্জিয়া। রক্ষণভাগে জমাট ফুটবল খেলে কাউন্টার অ্যাটাককে গুরুত্ব দেয় দলটি। কাজও হয় তাতে পর্তুগালের আক্রমণ ঠেকিয়ে দ্রুত পাল্টা আক্রমণে উঠে গোল করার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দিতে গিয়ে ভুল করে বসে পর্তুগাল। পেনাল্টি পেয়ে যায় জর্জিয়া। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে পাওয়া ওই পেনাল্টি থেকে পর্তুগালকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়ার দায়িত্বটা বেশ দক্ষতার সঙ্গে করেছেন গিওর্গে মিকাওতাদজে। প্রথম গোলেও ভূমিকা ছিল তার। আর এবার নিজেই দলের ব্যবধান দ্বিগুণ করলেন।
এর ম্যাচের বাকিটা সময় মরিয়া হয়ে গোলের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা পেরে উঠেনি পর্তুগাল। ম্যাচের ১৬ মিনিটে রোনালদোর নেওয়া দুর্দান্ত এক ফ্রি–কিক ঠেকিয়ে দেন জর্জিয়ার গোলরক্ষক। ২৮ মিনিটে গোল পেতে পেতেও পায়নি পর্তুগাল। ২ গোল হজম করার পর সেই আক্রমণ বেড়ে যায় কয়েকগুণে। একের পর এক আক্রমণে কাঁপছে তখন জর্জিয়ার রক্ষণ। তবে সেই কাঁপনে চিড় ধরেনি জর্জিয়ার রক্ষণে। বরং সুযোগ বুঝে কাউন্টার আক্রমণে পর্তুগালের পরীক্ষাও নিয়েছে দলটি। আর শেষ পর্যন্ত দুই পরীক্ষাতেই লেটার মার্ক তুলে পর্তুগালকে হারানোর মহাকাব্য লিখে মাঠ ছেড়েছে জর্জিয়া। নিশ্চিত করেছে শেষ ষোলো।
কিন্তু অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক ফুটবলে বিপদও তৈরি হচ্ছিল পর্তুগালের জন্য। প্রতি–আক্রমণে জর্জিয়া বারবার হুমকি তৈরি করছিল। শেষ দিকে অবশ্য ম্যাচে ফেরার জন্য একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যায় পর্তুগাল। একাধিকবার খুব কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও ভাঙতে পারেনি জর্জিয়ার রক্ষণ–দুর্গ। হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে পর্তুগালকে।
গ্রুপ ‘এফ’ থেকে তৃতীয় সেরা দলগুলোর একটি হয়ে পরের পর্বে গেল জর্জিয়া। এই গ্রুপের অন্য ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রকে ২–১ গোলে হারিয়েছে তুরস্ক। এ জয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে তুরস্কও। অন্যদিকে শেষ ম্যাচে হারলেও প্রথম দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে যাচ্ছে পর্তুগাল।