Logo
Logo
×

খেলা

হুমায়ুন আহমেদের সেই ‘ফাউন্টেনপেন’ সাকিব ফুরালেন অবশেষে!

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম

হুমায়ুন আহমেদের সেই ‘ফাউন্টেনপেন’ সাকিব ফুরালেন অবশেষে!

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখন হুমায়ুন আহমেদ তার ‘ফাউন্টেনপেন’ নামের একটি বই উৎসর্গ করেছিলেন সাকিব আল হাসানকে। সে সময় সাকিবের ক্যারিয়ারের সূচনালগ্ন। সাকিবকে বই উৎসর্গ করার কারণ হিসেবে হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, সাধারণ বলপয়েন্ট কলমের কালি শেষ হয়ে গেলে আর লেখা যায় না। কিন্তু ফাউন্টেনপেন কালি শেষ হলে আবার কালি ভরে লেখা যায়। সাকিব হচ্ছে আমাদের ফাউন্টেনপেন। সবাই থেমে গেলেও সাকিব থেমে যায় না। ছেলেটা অদম্য, ‘অফুরন্ত।’ সেই সাকিব কি অবশেষে ফুরিয়ে গেলেন। তাই হবে হয়তো। সাকিব না ফুরালে এমন দিন দেখতে হতো বুঝি আজ বাংলাদেশকে?

সেটি হওয়ার কথা ছিল না। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন নক্ষত্রের মতো আলো ছড়াতে দেখা যায়নি কাউকেই। এই সাকিব এক সময় ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে নিয়মিতই বাংলাদেশ দলকে জিতিয়েছেন। হাল ধরেছেন। টেনে তুলেছেন। শেষ বেলায় বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন। লম্বা সময় ধরে রেখেছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারের তকমা। সেটাও এক ফরম্যাটে নয়। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই। আর এখন কোথায়ও সাকিবের জায়গা নেই। সবশেষ স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে ঝুলছিল টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষ অলরাউন্ডারের তকমাটা। সেটাও অবশেষে খুইয়ে বসেছেন সাকিব। আর সেটা হয়েছে টি-টোয়েন্টিতে তার এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রেও। সুপার এইটে টানা তিন ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

হ্যাঁ, আপনি হয়তো বলতে পারেন ম্যাচ জেতানোর দায়িত্বটা কি কেবলই সাকিবের। বিষয়টি সেটা না হলেও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার এই কাজ করায় সবাই ধরেই নিয়েছে সাকিব অন্তত হতাশ করবেন না। তাছাড়া বিশ্ব ক্রিকেটে সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশের কজনকেই বা আর চেনে সবাই বলুন। তাই দায়িত্বের সিংহভাগটা তো তার ওপরই বর্তায়। তাছাড়া সাকিব এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে খেলছেন। অভিজ্ঞতা কি বাজারে কিনতে পাওয়া যায় বলুন?

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবকটি আসরে খেলা শেষ বিশ্বকাপ এটাই। হয়তো আফগানদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটাও খেলে ফেলেছেন সাকিব। কিন্তু বিদায় বেলায় তো তার মাথা উঁচু করে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যেই আসনে তিনি বসেছেন তাতে সম্মান তার প্রাপ্যই। তাই সমর্থকরা অন্তত আশা করেছিল শেষ বেলায় হয়তো সেমির সমীকরণটা তিনিই সহজ করে দেবেন ব্যাট হাতে। অথচ মাঠে নেমে উল্টো দেখতে হলো। সাকিব ফিরলেন নাভিন উল হকের প্রথম বলেই। দায় সারা একটা  ইনিংসে শেষ হলো সাকিবের বিশ্বকাপ যাত্রা! সঙ্গে বাংলাদেশেরও। 

আর বোলিং সেটা তো পুরো আসর জুড়েই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। যেই সাকিব একসময় ছিলেন প্রতিপক্ষের ত্রাস। সেই সাকিবকে বোলিংয়ে আনতেও দ্বিধা বোধ করেছেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। দলকে প্রয়োজনের সময় ব্রেক থ্রু এনে দিতে তো পারেন-ই-নি বরং রানের খাতা খুলে দলকে ডুবিয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স অন্তত সে কথায় বলে। ব্যাট হাতে ৭ ম্যাচে ১১১ রান আর মোটে ৩ উইকেট। যা জানান দেয় সাকিবের অসহায়ত্বের।

এরপরও সাকিব এই বিশ্বকাপে কিছু রেকর্ড অন্তত গড়ে গেছেন। এই যেমন সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ আসরে খেলার রেকর্ড। বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ উইকেটের মাইলফলক। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ফিফটির রেকর্ড। সাকিবের নামে এমন বহু রেকর্ডই আপনি পেয়ে যাবেন হয়তো। কিন্তু সেই পারফর্মার সাকিবকে কি আর কখনোই খুঁজে পাবেন আপনি। যেই সাকিব মাঠে নামলে আপনি অন্তত বিশ্বাস রাখতেন, সাকিব আছে আর ভয় নেই, এবার আমরা ম্যাচটা জিততে যাচ্ছি। আর সেটা যদি না হয় তাহলে বলতে দ্বিধা কিসের সাকিব ফুরিয়ে গেছেন।...

হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে থাকলে হয়তো তার সেই ফাউন্টেনপেন সাকিবকে দেখে বেশ দুঃখই পেতেন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম