ড্রেসিংরুমে সাকিব-তামিমের মধ্যে কথা হয় না, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ব্যাপারটি সামনে এনেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। তার পর থেকেই শুরু হয় আলোচনা। তামিম সেইসময় সাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বলেছিলেন, মাঠের খেলায় সাকিবের সঙ্গে তার কোনো সমস্যা নেই।
এবিষয়ে গত সেপ্টেম্বরে সাকিবও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তামিমের সঙ্গে সম্পর্ক যে আগের মতো বন্ধুত্বের পর্যায়ে নেই, পরোক্ষভাবে সেটি স্বীকার করেন এই অলরাউন্ডার। নতুন করে বিষয়টি সামনে উঠে আসার কারণ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গবিডির সাকিবকে নিয়ে বানানো একটি প্রামাণ্যচিত্র ‘সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপ স্পেশাল’। সেখানে তামিমের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আবারও কথা বলেছেন সাকিব।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে কথা বলেছিলেন সাকিব। বিশ্বকাপ খেলতে এখন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজে থাকা সাকিব ও তামিমের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন, ‘কথা হতো না, এটা একদম ভুল কথা। আমাদের একসময় যে সম্পর্কটা ছিল, সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকতাম, ওই সম্পর্কটা অনেক দিন ধরেই ছিল না।’
সাকিব এরপর যার যার পারিবারিক জীবনের প্রসঙ্গ টানলেন। একসময় একই ভবনের ওপরতলা ও নিচতলায় থাকতেন সাকিব ও তামিম। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে বিভিন্ন রকম ব্যস্ততা ও পারিবারিক দায়িত্ববোধের কারণে বিচ্ছিন্ন হতে হয়। সাকিবের ভাষায়, ‘আমি বিয়ে করলাম। সে (তামিম) বিয়ে করল। দুজনের বাসা আলাদা, আলাদা জায়গায় থাকা—এভাবে (দুজনের) সময়টা অনেক কমে যায়।’
তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই ওই (পূর্বের) নৈকট্য ধীরে ধীরে কমতে থাকে। মানুষের আলাদা জীবন চলে আসে। আলাদা পারিবারিক জীবন। এই ব্যস্ততাগুলোর সঙ্গে ধীরে ধীরে সময়টাও পাল্টে যেতে শুরু করে।’
পাল্টে যাওয়া সেই সময়ের পর কী হলো? জবাবে সাকিব বলেন, ‘তারপর যেটা হয়েছে, মাঠে দেখা হলে যখন কোনো প্রয়োজন হতো, তখনই কথা হতো। এর থেকে খুব বেশি যে কথা বলার দরকারও ছিল, আমার কাছে সেটা মনে হয় না।’
সাকিব এরপর বলেছেন, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান তামিম ও তার মধ্যে কথা না হওয়ার ব্যাপারটি সামনে টেনে আনার পর বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, ‘পাপন ভাই বলার পর থেকে এই ব্যাপারটি আরও আলোচনায় চলে আসে। আমার মনে হয় ওটা বেশি সমস্যা তৈরি করেছে এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিংবা এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য।’
গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে দেশের একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তামিমের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছিলেন সাকিব। তামিম এখন জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও দীর্ঘদিনের সতীর্থকে নিয়ে সেখানে বিতর্কিত কিছু মন্তব্যও করেছিলেন এই অলরাউন্ডার। তামিম টিমম্যান কিনা, সে প্রশ্নও তুলেছিলেন সাকিব।
সেই সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কোনো বার্তা দিতে চেয়েছিলেন কি না? সাকিব বলেছেন, ‘না, আমি কাউকে কোনো বার্তা দেওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিইনি। এটা অবশ্যই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছিল যে (বিশ্বকাপে খেলতে) যাওয়ার আগে সবকিছু পরিষ্কার করে যাওয়া, যাতে করে মানুষ জানে কী হয়েছে এবং কী কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো।’
সাকিবের কাছে সরাসরি জানতে চাওয়া হয়, তামিমের সঙ্গে এমন শীতল সম্পর্কটা তিনি কখনো ঠিক করার কথা ভেবেছেন কিনা? তার জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ঠিক-ভালোর কিছু নেই। আমরা যত দিন খেলেছি একসঙ্গে, ড্রেসিংরুম যত দিন ভাগ করেছি, দলের ক্ষতি হোক কিংবা ক্ষতি হবে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না। যাদের যতটা অবদান রাখার প্রয়োজন ছিল, সেটা কথা বলেই হোক, না বলেই হোক, কোনো জায়গাতেই এটাতে কখনো সমস্যা ছিল না।’