১ বছরে বিসিবির আয় রেকর্ড ৫০৭ কোটি টাকা
মোজাম্মেল হক চঞ্চল ও জ্যোতির্ময় মন্ডল
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে মন এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। এজন্যই গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে বাণিজ্য করার সনদ নিয়ে রাখতে চায় বিসিবি। সব ঠিক থাকলে আগামী ৩১ মার্চ বিসিবির বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্রের সেই অনুমোদনও মিলবে।
এক হাজার-দুই হাজার নয়, বিসিবির সম্পদের আর্থিক মূল্যমান প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। আর সেই বলেই দেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া ফেডারেশনটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এক বছর আগেও বিসিবির সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৭২ কোটি টাকা। এক লাফে সেই সম্পদ পাঁচ হাজার কোটি ঢাকায় পৌঁছে গেছে। কেননা পূর্বাচলে রাজউকের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে ৩৭৩৬ শতাংশ জমি পেয়েছিল বিসিবি।
বর্তমান বাজার মূল্যে যার পরিমাণ ৩৫৪৯ কোটি টাকা। এই জমিতেই শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণাধীন। ৭৭২ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে বিসিবির। এর মধ্যে বিসিবির মূল ডিপোজিট ৬৮৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) জন্য ৮৭ কোটি টাকার পৃথক ডিপোজিট রয়েছে। নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে রয়েছে ১৮৪ কোটি টাকা। জুনে আরও ৭৮ কোটি টাকা জমা হওয়ার কথা। ১২ বছর আগে বিসিবির সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৯৮ কোটি টাকা।
২০১২ সালে আইসিসি থেকে বিসিবি পেয়েছিল ১৩৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে আইসিসি অনুদান দিচ্ছে ২৩৮ কোটি টাকা। বিসিবি নিজেদের ব্র্যান্ড ভেলু সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে স্পন্সরশিপ রাইটস থেকে আরও অনেক বেশি আয় করতে পারত।
এই খাত থেকে ২০২২-২৩ মৌসুমে বিসিবির আয় মাত্র ৩৮ কোটি টাকা। অথচ এক যুগ আগে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে যখন বলার মতো অবস্থায় ছিল না তখনো স্পন্সরশিপ রাইটস থেকে বিসিবির আয় বেশ ছিল। ২০১১ সালে স্পন্সরশিপ থেকে আয় ছিল সাড়ে ১০ কোটি টাকা।
২০১৩ সালে বিপিএল থেকে আয় ছিল ৩৯ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছিল মাত্র পাঁচ কোটি টাকা! অথচ ২০২৩ সালে বিপিএল থেকে এসেছে ৪৮ কোটি। আর ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা।
বিসিবির সব হিসাব-নিকাশ ক্রিকেটারদের কেন্দ্র করেই হয়েছে। অথচ সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো করেই বেতন-ভাতাদি বেড়েছে ক্রিকেটারদের। সেটাও ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের আন্দোলনের পর। ২০১২ সালে জাতীয় ক্রিকেটাররা বছরে মোট বেতন পেতেন দুই কোটির কিছু বেশি। এই সময়ে বিসিবির মোট বেতন দিতে হতো ১৬ কোটি টাকা।
এর এক বছর পরই বেতন বেড়ে হয়ে যায় সাড়ে ২১ কোটি। এখন বিসিবিকে বার্ষিক বেতন ও ভাতার খরচ বাবদ দিতে হয় ৬৭ কোটি টাকা। আর জাতীয় দলের ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের ২০২৩ সালে মোট বেতন দিয়েছে বিসিবি সাত কোটি। এক্ষেত্রে মেয়েদের বেতন খালি চোখে অনেক বেড়েছে। জাতীয় দলের মেয়েরা পেয়েছেন এক কোটির কিছু বেশি।
ক্রিকেটাররা ২০১৯ সালে যেসব চাহিদা দেখিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন তার বড় অংশই এখনো পূরণ হয়নি। বিসিবির সম্পদের পরিমাণ অনেক বাড়লেও জাতীয় ক্রিকেটারদের পূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তা আসেনি। শীর্ষ সারির ২০-৩০ জন ক্রিকেটারেরই পকেট ভরেছে যা।
বিসিবির সংবিধানের ছয় অনুচ্ছেদের ৬.১৭ উপানুচ্ছেদে ছিল ক্রিকেটারদের উন্নায়নে অর্থায়নের জন্য সরকার পৃষ্ঠপোষক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অন্যান্য উৎস হতে তহবিল সংগ্রহ এবং উদ্বৃত্ত তহবিলের ঝুঁকিহীন লাভজনক বিনিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ। এই অনুচ্ছেদেই আনা হচ্ছে বড় পরিবর্তন।
এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এফডিআর ও প্রাইজবন্ড ক্রয় করা। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যে কোনো তফশিল ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ, এলসি খোলা অথবা যে কোনো ঋণের বিপরীতে জামানত হিসাবে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক প্রদান বা চার্জ তৈরি করা অথবা ঋণের জামানত হিসাবে এফডিআরের বিপরীতে লিয়েন এর ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করা। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা।
এছাড়া ৬.২০ অনুচ্ছেদে আসছে সূপরিবর্তন। এক বা একাধিক ট্রাস্ট, কোম্পানি, সোসাইটি বা ফাউন্ডেশন গঠন করা। এবং সেগুলো বিসিবির যে কোনো শেয়ার বোর্ডের পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে পাদধিকারবলে বোর্ড সভাপতি, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুক‚লে বরাদ্দকরণের কথা বলে সংশোধনী উত্থাপন হবে।
এই সময়ে বিসিবি মোট আয় ধরেছে ৪৪৭ কোটি। এই সময়ে ব্যয় হতে পারে ৪০৮ কোটি। পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আড়াইশ কোটি টাকা। বিপিএল থেকে আগামী মৌসুমে আয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি, এসিসি থেকে ৪৩ কোটি, স্পন্সরশিপ ২৮ কোটি এবং টিভি রাইটস থেকে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা।