মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিংয়ের পরও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৮৩ রানের বিশাল টার্গেট তাড়ায় টাইগাররা হেরে যায় ১৪৯ রানে।
বিশ্বকাপের চলতি আসরে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩৪৫ রানের টার্গেট তাড়ায় জয়ের ইতিহাস গড়ে পাকিস্তান। তাদের সেই রেকর্ড ভাঙতে হলে বাংলাদেশকে আজ ৩৮৩ রান করতে হতো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমে ৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় টাইগাররা।
দলের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিং করেছেন সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ২৩৩ রানে অলআউট হয়ে ব্যবধান কমালেও পরাজয় এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।
টাইগারদের বিপক্ষে ১৪৯ রানের বিশাল জয়ে নিউজিল্যান্ডকে হটিয়ে ৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় পজিশনে উঠে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
মঙ্গলবার ভারতের মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে ১৪০ বলে ১৭৪ রান করেন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ৪৯ বলে ৯০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন হেনরি ক্লেসেন। ৬৯ বলে ৬০ রানে ফেরেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এদিন দলীয় সর্বোচ্চ ৩৮২ রান করে প্রোটিয়ারা। এর আগে ২০১৭ সালে ইস্ট লন্ডনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে সর্বোচ্চ ৩৬৯ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
মঙ্গলবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৬ রানে ২ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় উইকেটে এইডেন মার্করামের সঙ্গে ১৩৭ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়েন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ৬৯ বলে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৬০ রান করে ফেরেন অধিনায়ক মার্করাম।
এরপর চতুর্থ উইকেটে হেনরি ক্লেসের সঙ্গে রীতিমতো তাণ্ডব চালান ডি কক। এই জুটিতে তারা মাত্র ৮৭ বল মোকাবেলা করে ১৪২ রানের জুটি গড়েন। ইনিংস ওপেন করতে নেমে ৪৫.১ ওভারে দলীয় ৩০৯ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ডি কক। তার আগে চলতি বিশ্বকাপে নিজের পঞ্চম ম্যাচে তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকান।
হাসান মাহমুদের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৪০ বলে ১৫টি চার আর ৭টি ছক্কার সাহায্যে ১৭৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন ডি কক। ডি কক আউট হওয়ার পর ব্যাটিং তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন হেনরি ক্লেসেন ও ডেভিড মিলার। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ২৫ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন তারা।
একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন হেনরি ক্লেসেন। নার্ভাস নাইনটিতে আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে দুটি চার আর ৯টি ছক্কার সাহায্যে খেলেন ৯০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ডেভিড মিলার ১৫ বলে এক চার আর ৪টি ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থামে ৫ উইকেটে ৩৮২ রানে।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ৯ ওভারে ৭৬ রান খরচ করে কোনো উইকেট পাননি মোস্তাফিজুর রহমান। ৯ ওভারে ৭৬ রানে ১ উইকেট নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। মাত্র ৬ ওভারে ৬৭ রানে ২ উইকেট নেন পেসার হাসান মাহমুদ। ৯ ওভারে ৪৪ রানে ১ উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৫ ওভারে ২৭ রানে কোনো উইকেট পাননি নাসুম। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩ ওভারে ২০ রানে কোনো সাফল্য পাননি।
৩৮৩ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩০ রান করে বাংলাদেশ। এরপর মাত্র ১ রানের ব্যবধানে হারায় ৩ উইকেট। একের পর এক সাজঘরে ফেরেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, ওয়ানডাউনে ব্যাটিংয়ে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
৩ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩১ রান। এরপর ২৭ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারায় আরও ২ উইকেট। ১৭ বলে ৮ রান আর ৪৪ বলে ২২ রানে ফেরেন ওপেনার লিটন দাস। দলীয় ৮১ রানে ফেরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি ১৯ বলে ১১ রানে ফেরেন।
৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় বাংলাদেশ। দলের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে কঠিন চাপের মধ্যে অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিং করে ১০৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রিয়াদ। ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ২২৫তম ম্যাচে এটা তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকান রিয়াদ। দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
মাহমুদউল্লাহর অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিংয়ের পরও ৪৬.৪ ওভারে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দলের হয়ে রিয়াদ একাই করেন ১১১ বলে ১১টি চার আর ৪টি ছক্কায় ১১১ রান। এছাড়া ৪৪ বলে ২২ রান করেন ওপেনার লিটন দাস। ১৯ বলে ১৯ রান করেন স্পিনার নাসুম আহমেদ।