হারিস রউফের উত্থান রূপকথার মতোই। ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুত গতির পেসার শোয়েব আকতারের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন রউফ। শুরুতে নগরির রাস্তায় টেপ টেনিস বলে ক্রিকেট খেলেন। এরপর লাহোর কালান্দার্সের উন্মুক্ত ট্রায়ালে অংশ নিয়ে কোচদের নজরে পড়েন।
এরপর পাকিস্তান সুপার লিগে অসাধারণ পারফরম্যান্স করায় অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশের দল মেলবোর্ন স্টার্সের দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি পেসার ডেল স্টেইন ইনজুরিতে পড়লে হারিস রউফকে তারা দলে নেয়। তাসমানিয়ান ক্লাব সুযোগ পেয়েই প্রত্যাশার চেয়েও ভালো খেলেন রউফ।
২০২০ সালে পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক হওয়া এই পেসার অল্প সময়েই পাকিস্তান পেস আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন।
চলতি বছরও ফর্মের তুঙে রয়েছেন এ পেসার। ঝড়ো গতি, বাউন্স আর সর্পিল সুইংয়ে ব্যাটারদের কুপোকাত করছেন তিনি।
এশিয়া কাপের ২০২৩ আসরের সুপার ফোরেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন ২৯ বছর বয়সি ডানহাতি পেসার। সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছে তার ‘ছেঁড়া’ জুতা পরে বোলিং করার কারণ।
বিশ্বকাপের আগে ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রামাণ্যচিত্র ‘ইনক্রেডিবল রাইজ অব হারিস রউফ’– মনে করিয়ে দিয়েছে তার অতীতের জীবনকথা।
বাড়তি উপার্জনের জন্য স্ন্যাকস (নাশতা) বিক্রি করা, টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলা হারিসের জীবনের গল্প বদলাতে খুব একটা সময় লাগেনি।
প্রামাণ্যচিত্রে হারিস বলেন, রোববারে নাশতাও বিক্রি করতাম। মায়ের একটা স্বপ্ন ছিল নিজেদের একটা বাড়ি হবে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, বাবা আমার ফি দেওয়ার মতো আয় করতেন না। আমি নিজেও এমন আয় করতাম না। কিন্তু টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলে সহজেই ফি দিতে পারতাম। টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলে পাকিস্তানে ক্রিকেটাররা দুই থেকে আড়াই লাখ রুপি পর্যন্ত আয় করতে পারেন। আমিও এমন আয় করতাম আর টাকা মায়ের হাতে দিতাম।
২০১৭ সালে লাহোর কালান্দার্সের ট্রায়ালে অংশ নিয়ে কোচ আকিব জাভেদের চোখে পড়েন হারিস। আকিবই মূলত বদলে দিয়েছেন হারিসকে। সেই ট্রায়াল থেকে তার যাত্রা শুরু।
কীভাবে ট্রায়ালে পাকিস্তানের সাবেক পেসার আকিবের চোখে পড়েন, সেই গল্পও শুনিয়েছেন হারিস।
এই খেলোয়াড় বলেন, ট্রায়ালে যারা ঘণ্টায় ৮৩ থেকে ৮৪ মাইল গতিতে বল করছিলেন, তাদের নির্বাচন করা হচ্ছিল। কিন্তু আমি যখন বল করি, প্রথম বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ৮৮ মাইল। তাহির মুঘল (কোচ) ভেবেছিলেন স্পিড মেশিনে কোনো সমস্যা আছে। তিনি আকিব ভাইকে ডাক দেন। আকিব ভাই আমাকে বল করতে বলেন, দ্বিতীয় বলটা করলাম ৯০ মাইল গতিতে। যখন আবার বোলিং করতে বললেন, তৃতীয় বলটা করলাম ৯২ মাইল গতিতে।
এই ট্রায়ালের পরই জীবন বদলে যায় হারিসের। সেই ট্রায়াল থেকে তিনি যান অস্ট্রেলিয়া। ২০১৮ সালে আবুধাবি টি-টোয়েন্টি ট্রফির জন্য লাহোর কালান্দার্স দলে ডাক পান হারিস। এভাবেই পাকিস্তানের ক্রিকেটে তার আগমন।