সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালের মধ্যে দ্বন্দ্ব ‘ওপেন সিক্রেট’। অন্যদিকে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে তামিমের দূরত্বের কথা সবারই জানা। শুধু তাই নয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে তামিমের সম্পর্কের টানাপোড়েন বহুদিনের, তাও এখন গোপন নয়।
মাহমুদউল্লাহকে কোচ হাথুরু পছন্দ করেন না, তাই দল থেকে বাদ পড়েছেন- এমন গুঞ্জনও রয়েছে। বিশ্বকাপের এক মাসও বাকি নেই। ভারতে অনুষ্ঠেয় এ আসরে সাকিব, তামিম ছাড়াও মাহমুদউল্লাহরও থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। আর প্রধান কোচ তো থাকবেনই। তাই শঙ্কা রয়েছে তাদের মধ্যে দূরত্বের প্রভাব পড়তে পারে দলে। যদিও ফের টাইগারদের টিম ডিরেক্টরের দায়িত্ব পাওয়া বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন তা মানতে নারাজ। তার মধ্যে সাকিব-তামিম-মাহমুদউল্লাহদের মধ্যে যতই দূরত্ব থাক তার প্রভাব ড্রেসিংরুমে দেখা যায়নি।
তবে এসব বাস্তবতা মেনে নিয়ে টিম ডিরেক্টর হিসেবে দলের মধ্যে কোনও ধরনের বিবাদ থাকলে তা মিটিয়ে ফেলতে কাজ করবেন সুজন। গণমাধ্যমকে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ডিরেক্টর হিসেবে আগে যে কাজ করেছি এবারও তা করবো কিনা তা এখনো জানি না। পাপন ভাই বলেছেন তাই রাজি হয়ে গেছি। কোচের সঙ্গে তামিমের দূরত্ব নিয়ে যে গুঞ্জন সে বিষয়ে আমি খুব বেশি কিছু জানি না। কি হয়েছে তাদের মধ্যে সেটি যেহেতু জানি না তাহলে মন্তব্য করা কঠিন। তবে এমন কিছু থাকলে সেটি যেন না হয় সেই চেষ্টাই করবো। আগের কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে তামিমের দূরত্ব ছিল। আমি তখন ওদের সঙ্গে কথা বলে সম্পর্কটাকে ঠিক করেছি। পরে তো তারা বন্ধুর মতই হয়ে গিয়েছিল।
অন্যদিকে অনেক নাটকীয়তার পর এশিয়া কাপের আগে ইনজুরির কারণে ওয়ানডের নেতৃত্ব ছেড়েছেন তামিম। তবে অনেকটাই নিশ্চিত নিউজিল্যান্ড সিরিজেই দেশসেরা এই ওপেনারকে দেখা যাবে মাঠে। খেলবেন নয়া অধিনায়ক সাকিবের নেতৃত্বে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে বিশ্বকাপ দলে তিনি থাকবেন। কিন্তু দলের মধ্যে সবচেয়ে প্রকাশ্যে যে দ্বন্দ্ব তা দেশের সেরা দুই তারকাকে ঘিরেই। তাদের এ দূরত্বও বিশ্বকাপ দলে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সুজন মনে করেন এটির সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
তিনি বলেন, দেখেন সাকিব আর তামিমের দ্বন্দ্ব এখন গোপন কিছু নয়। কিছু দিন আগে সাকিব কিন্তু তামিমের নেতৃত্বে খেলেছে। এবার তামিম খেলবে সাকিবের নেতৃত্বে। বড় বিষয় হলো তাদের এই বিষয়টা কোনদিনও ড্রেসিং রুমে প্রভাব পড়েনি। আমার মনে হয় অভিষ্যতেও পড়বে না। তারা দু’জনই খেলে বাংলাদেশের জন্য। মাঠে বা ড্রেসিং রুমে যখন থাকে তারা দেশের জন্য এক হয়ে সবটুকু দিয়ে খেলে।
তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের আরো সহনশীল হতে হবে বলেই মনে করেন টাইগারদের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ। বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের। যেমন তামিম ইকবাল আফগানিস্তান সিরিজে যেভাবে অবসর ঘোষণা করেছিলেন তা মোটেও ভালো কিছু হয়নি বলেই মনে করেন তিনি।
সুজন বলেন, যেভাবে তামিম অবসরে গেলো তা গ্রহণযোগ্য নয়। এত বছর ধরে ও বাংলাদেশ দলে খেলছে। আমাদের কাছে অন্তত সমস্যাগুলো আলোচনা করতে পারতো। এটি আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে সেই সময় দারুণ একটি উদ্যোগ নিয়ে তামিমকে খেলায় ফিরিয়েছেন। বিশেষ করে আমি অনুরোধ করবো দলের সিনিয়র যারা আছেন যারা দেশের জন্য বছরের পর বছর সার্ভিস দিয়ে আসছেন তারা যেন একটু সহনশীল হয়। এমন কিছু না করে যা দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দলে থাকা না থাকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। বিশেষ করে কোচ হাথুরু রিয়াদকে চায় না বলেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা। এ নিয়ে সুজন বলেন, এমন নয় যে রিয়াদ আমাদের সিস্টেমের বাইরে চলে গেছে। বিসিবি সভাপতি, কোচ সবাই তো বলেছে যে ও আমাদের পরিকল্পনায় আছে। এশিয়া কাপে নেই, এমন নয় যে সে নিউজিল্যান্ড সিরিজ বা বিশ্বকাপে থাকবে না। আমি তো মনে করি তার খেলার সম্ভাবনা আছে। আর কোচ হাথুরু কিন্তু রিয়াদের শত্রু নয়। তাকে কিন্তু দলের রেজাল্টের জন্য টাকা দেওয়া হয়। সে তো চাইবে সেরা দল নিয়ে জয় তুলে নিতে। তাই তার টিম গোছাতে অনেক ক্রিকেটারকেই দেখার দরকার আছে। তিনি রিয়াদের জায়গায় হয়তো বিকল্প কাউতে দেখে নিতে চাইছেন তরুণদের মধ্যে থেকে। আর রিয়াদকে তো আর পরীক্ষা দেওয়ার কিছু নেই। ওকে তো যে কোনও সময় দলে নেয়া যাবে।