এক কথায় বলা যায় দিল্লির ওপেনার পৃথ্বি শয়ের কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেল গোটা কলকাতা।
কলকাতার ছোঁড়া ১৫৫ রানের লক্ষ্যের জবাবে পৃথ্বি শ একাই করলেন ৮২ রান। তাও কি না মাত্র ৪১ বলে! ১১টি বাউন্ডারি আর ৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
দিল্লিতে পৃশ্বি শয়ের শো দেখল আইপিএলপ্রেমীরা।
ম্যাচের প্রথম বল থেকেই কলকাতার বোলাদের ওপর চড়ায় হয়েছেন পৃথ্বি। শিভাম মাভির করা প্রথম ওভারেই নিয়েছেন ২৪ রান। ৪ বলে ৪ বাউন্ডারি আর একটি রান ওয়াইডে।
পৃথ্বির সেই মারকুটে শুরুটাই যেন বিধ্বস্ত করে দেয় নাইট শিবিরকে। এরপর যেন বল করতেই ভুলে গেছেন কলকাতার বোলাররা।
নারিন, কামিন্স, বরুণ, প্রসিদ্ধ আজ কেউই বাঁচেননি পৃথ্বি শয়ের তাণ্ডবলীলা থেকে। শিখর ধাওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র ১২ ওভারেই ১০০ ছাড়ান পৃথ্বি।
এর আগে ৭ম ওভারে কামিন্সের প্রথম ডেলিভারিতে ডিপ স্কয়ার লেগে পাঠিয়ে মাত্র ১৮ বলে ফিফটি পূরণ করেন পৃথ্বি।
পৃথ্বির সামনে সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিবের পরিবর্তে একাদশে ঠাঁই পাওয়া ক্যারিবীয় স্পিনার সুনীল নারিন ও ভারতীয় পেসার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা।
৪ ওভারে ৩৬ রান নিয়ে কোনো উইকেট পাননি নারিন। প্রতি ওভারে ৯ করে দিয়েছেন। নারিনের চেয়ে বেশি খরুচে প্রসিদ্ধ। ৩ ওভারেই ৩০ রান দিয়েছেন তিনি।
সাফল্য এসেছে প্যাট কামিন্সের ঝুলিতে। শিখর ধাওয়ানকে হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন তিনি। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে ধাওয়ানকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন কামিন্স। ৪৫ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ধাওয়ান।
জুটি ভাঙে ১৩২ রানের। কিন্তু তাতে উল্লাস করে কোনো লাভ হয়নি। ধাওয়ান আউটের সময় জয়ের জন্য দিল্লির প্রয়োজন পড়ে ৩৭ বলে ২৩ রানের।
নিজের পরবর্তী ওভারে পৃথ্বি শকে ফেরান কামিন্স। পয়েন্টে নিতিশ রানার হাতে তালুবন্দি হয়ে শেষ হয় পৃথ্বির ৮২ রানের অনবদ্য ইনিংস।
এই রান করতে মাত্র ৪১ বল খেলেছেন এই দিল্লির হার্ডহিটার।
একই ওভারের পঞ্চম বলে দিল্লির অধিনায়ক ঋষভ পন্তকে ফেরান কামিন্স। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন মাত্র ৪ রান। কিন্তু হাতে রয়েছে ৪ ওভার।
১৬তম ওভারে প্রসিদ্ধকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দিল্লিকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন স্টইনিস।
ফলে ২১ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে হারাল দিল্লি ক্যাপিটালস।
এর আগে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস জিতে কলকাতাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান দিল্লির অধিনায়ক ঋষভ পন্ত।
গত কয়েক ম্যাচের মতো আজকের ম্যাচেও একাদশে ছিলেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডা সাকিব আল হাসান। তার বদলে কলকাতার আস্থা ক্যারিবীয় স্পিনার সুনীল নারিন।
তবে আজও ফ্লপ নারিন। আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি নারিন। আজ শূন্য রানে ফিরেছেন। মাত্র ১ বল টিকেছেন তিনি।
আজ শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ৩ ওভার ভালোই মোকাবিলা করে কলকাতা। কিন্তু চতুর্থ ওভারে অক্ষর প্যাটেলের চতুর্থ বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ১৫ রানে থামেন ওপেনার নিতিশ রানা।
এরপরই ব্যাটিংয়ে শুবমান গিলের সঙ্গে হাল ধরেন রাহুল ত্রিপাটি। দুজনে মিলে কোনো বিপদ এড়িয়ে ৬ ওভার খেলেন।
দশম ওভারে ত্রিপাটিকে থামিয়ে দেন মার্কুস স্টইনিস। ডিপ কভারে ললিত যাদবের হাতে তালুবন্দি হন তিনি।
১৭ বলে ১৯ রান করেন ত্রিপাটি। ত্রিপাটির ক্যাচ তুলে নিয়ে হয়ত মন ভরেনি ললিতের। পরবর্তী ওভার তিনি বল করেন। আর ওই ওভারে শূন্য রানে ফেরান কলকাতার দুই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়কে।
অধিনায়ক এইউন মরগান ও সাকিবের বদলে নেওয়া স্পিনার সুনীল নারিন রানের খাতা খুলতেই পারেননি।
১০ম ওভারে ললিতের দ্বিতীয় বলে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন মরগান, যা সহজে লুফে নেন স্মিথ।
একই ওভারে চতুর্থ বলে ক্যারিবীয় সেনসেশন সুনীল নারিনকে বোল্ড করেন ললিত। ১ বল মোকবিলা করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন নারিন।
ধারণা করা হচ্ছিল ১২০ -১৩০ এর আশপাশে গিয়ে থামবে কলকাতা। কারণ ৮২ রানেই টপঅর্ডার আর মিডলঅর্ডারসহ ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে কলকাতা।
তবে এমন পরিস্থিতিতে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে কলকাতার মান রক্ষা করেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল।
মাত্র ২৭ বলে ২ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় ৪৫ রান করেন। তার এই টর্নেডো ইনিংসের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান জমা করে কলকাতা।
তবে জলে গেল রাসেলের সেই ইনিংস। পৃথ্বি শয়ের কাছে হেরে গেল গোটা কলকাতা।
এই ম্যাচ হারের পর প্লে-অফে ওঠার সমীকরণ আরও কঠিন হয়ে গেল কলকাতার। ৭ ম্যাচে তাদের জয় মাত্র ২টিতে। ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে শাহরুখ খানের দল।
অন্যদিকে ৭ ম্যাচে ৫ জয় ও ২ হার নিয়ে কোহলির আরসিবিকে পেছনে ফেলল ঋষভের দিল্লি। ১০ পয়েন্ট নিয়ে রানরেটে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে দিল্লি ক্যাপিটালস।