
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) শেষে ছুটি পেয়ে নড়াইলে ছুটে যান মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে পরিবার নয়, নিজ এলাকার উন্নয়নকাজের তদারকিতে সেখানে যান তিনি। সেই তদারকিতে অগ্নিমূর্তি হয়ে আবির্ভূত হন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক।
গেল ২৫ এপ্রিল নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে যান স্থানীয় সাংসদ মাশরাফি। গিয়ে দেখেন বিনাছুটিতে চার চিকিৎসক অনুপস্থিত আছেন। পরে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের তাগাদা দেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে মাশরাফির ঝটিকা সফরের ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায়। পরে চার চিকিৎসককে প্রথমে কারণ দর্শানো নোটিশ। এর পর গেল সোমবার তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে মাশরাফির অনুরোধে তাদের দায়িত্বে বহাল রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় চিকিৎসক সমাজ এবং সমাজের নানা পর্যায়ে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে মাশরাফির প্রতি আপত্তিকর ও অশালীন ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা। অনেকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
এ ক্ষোভ উগরে দেয়াদের অন্যতম হোতা দেশের জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ও নাগরিক টিভির প্রধান নির্বাহী ডা. আবদুন নূর তুষার। পেশায় তিনি নিজেও একজন চিকিৎসক। মাশরাফির সমালোচনা করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ উপস্থাপক লেখেন- মেরুদণ্ডহীন চিকিৎসক সমাজকে ওএসডি করা যত সহজ, রোগীর জন্য সেবা নিশ্চিত করা তত সহজ নয়।
সেই পোস্টে ডা. তুষার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক, যন্ত্রাংশ সংকটসহ চিকিৎসকদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে ম্যাশকে এ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন।
তবে মাশরাফির ভক্তরা চিকিৎসকদের এ কটাক্ষ মেনে নিতে পারেননি। তারাও ফেসবুকে নানাভাবে চিকিৎসকদের সমলোচনা করছেন। সবাই কাঠগড়ায় দাঁড় করান ডা. নূর তুষারকে। তাকে রীতিমতো তুলাধোনা করছেন তারা।
আমিরুল হক লিখেছেন- তুষার সাহেব, আগে সরেজমিন হাসপাতালগুলোতে গিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন, তারপর মাশরাফিকে প্রশ্ন করুন। সরকারি হাসপাতালে নার্সদের টাকা না দিলে হাতের স্যালাইনটাও খোলে না। আপনি তো পেশাদার দালাল।
রণজিৎ দে লেখেন- আপনার বিবৃতিটি সম্পূর্ণ পড়েছি এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা এখানে আপনি তুলে ধরেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু একটা প্রশ্ন- পর্যাপ্ত জিনিসপত্র থাকবে না বলেই কি ডাক্তাররা তাদের কর্তব্যে অবহেলা করবেন? একজন মানুষ যখন চিকিৎসা নিতে যায় সরকারি হাসপাতালে, তখন কি পরিমাণ হেনস্তা হতে হয় তা ভুক্তভোগীরাই জানে। টাকা ছাড়া কোনো গাছের পাতাও নড়ে না। এসব অনিয়ম শুধু ডাক্তাররাই করেন। আর আপনি বলছেন ওরা ছয় দিন কাজ করে আট ঘণ্টা করে। আরও ভালো করে খবর নিয়ে দেখেন ৬*৮=৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৬ দিনে ১৫ ঘণ্টা সময় দেই কিনা তা একটু লক্ষ্য করুন।
ফিরোজ প্রধান নামে একজন লিখেছেন, বুঝলাম অনেক কিছুই নেই, তাই বলে আপনারা কাজে ফাঁকি দেবেন! রোগীরা আর যাই হোক ডাক্তারকে কাছে পেলেই সান্ত্বনা খুঁজে পান। সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েও তুষার সাহেবের মতো ডাক্তাররা নির্লজ্জভাবে ডাক্তারের পক্ষালম্বন করলেন। আরেকটি বিষয় ডাক্তারদের মফস্বল শহরে পোস্টিং দেয়ার পর কেন তারা থাকতে চান না, কেন তারা বিভাগীয় শহর বা ঢাকায় আসার জন্য উদগ্রীব থাকেন সেই প্রশ্ন রইল তুষারের কাছে। এই মহৎ সেবামূলক পেশাটাকে দয়া করে বাণিজ্যিকীকরণ করবেন না।
মুকুল রায় লিখেছেন, বাংলাদেশে এ এক সমস্যা- জাত ভাই। ড্রাইভারের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলে সব ড্রাইভার আন্দোলনে নেমে যাবে। ডাক্তারের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলে সব ডাক্তার রুখে দাঁড়াবে। এখন অন্য সরকারি কর্মচারীরা এদের দেখাদেখি রুখে দাঁড়ালেই হয়।
তবে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে মিঠুন গোস্বামী জয় লিখেছেন, আবদুর নূর তুষার আর মাশরাফির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করাই উত্তম। মাশরাফির কাজটা যেমন ঠিক ছিল, তেমনি তুষারের কথাগুলোও যৌক্তিক। দুটি বিষয়কে এক করে সমস্যাগুলোর সমাধান করলেই মানুষ উপকৃত হবে।