কোপা ডেল রে, এর পর লা লিগা। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে টানা দুই এল-ক্লাসিকো হেরে টালমাটাল রিয়াল মাদ্রিদের কবর রচনা করল আয়াক্স। নিজেদের ডেরায় পুঁচকে আয়াক্সের বিপক্ষে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। দুর্দান্ত জয়ে দুই লেগ মিলি ৫-৩ গোলের অগ্রগামিতায় কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখল ডাচ দলটি।
মঙ্গলবার রাতে নিজেদের দুর্গে আয়াক্সকে আতিথ্য দেয় রিয়াল। শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে শেষ তিন ম্যাচে জালের দেখা না পাওয়া লস ব্লাঙ্কোরা। সপ্তম মিনিটে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়িয়ে দলকে লিড এনে দেন হেকিম জিয়েখ। তাতে ছিল দুসান তাদিচের আলতো ছোঁয়া। প্রথম লেগে দুর্দান্ত খেলেও হেরে যাওয়া আয়াক্স গোল পেয়ে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। আক্রমণের পসরা সাজান অতিথিরা। সাফল্যও হাতেনাতে মেলে। ১৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ডেভিড নারেস। তাদিচের বাড়ানো বল ধরে আগুয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ধুঁকতে থাকে রিয়াল। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ২৯ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন লুকাস ভাসকেজ। ৬ মিনিট পর তাকে অনুসরণ করেন ভিনিসিউস জুনিয়র। বদলি নামেন গ্যারেথ বেল ও মার্কো আসেনসিও। এতে স্বাগতিকদের খেলায় গতি বাড়ে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা বেশ গোছানো হয় তাদের।
পরক্ষণেই ছন্দ হারায় রিয়াল। এদিন দারুণ ছন্দে ছিলেন আয়াক্সের তাদিচ। প্রথম দুই গোলে অবদান রাখলেও গোল পাচ্ছিলেন না। অবশেষে সাফল্য পান তিনি। ৬২ মিনিটে সতীর্থের পাস ডি-বক্সের মুখে পেয়ে ভেতরে ঢুকেই বাঁ পায়ের জোরালো শটে বল ঠিকানায় পাঠান বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। গোলটির আক্রমণের শুরুতে বল বাইলাইন পেরিয়ে গিয়েছিল কিনা সন্দেহে ভিএআরের সাহায্য নেন রেফারি। শেষ পর্যন্ত গোলের বাঁশি বাজান তিনি।
পরে গোল পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে রিয়াল। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হয়। ৭০ মিনিটে সার্জিও রেগিলনের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মার্কো অ্যাসেনসিও। এতে প্রাণ সঞ্চারিত হয় বার্নাব্যুতে। জেগে ওঠে গ্যালারি।
তবে গ্যালাকটিকোদের দৌড় ছিল সেই পর্যন্তই। দুই মিনিট পর তাদের নিরাশ করেন লেসে শুন। বাঁ দিক থেকে অসাধারণ ফ্রি-কিকে ক্রসবার ঘেঁষে দূরের পোস্ট দিয়ে নিশানাভেদ করেন তিনি। এতে স্তব্ধ হয়ে যান রিয়াল সমর্থকরা।
পরাজয় নিশ্চিত জানতে পেরে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সান্তিয়াগো সোলারির শিষ্যরা। ঘটনাবহুল ম্যাচের ইনজুরি টাইমে ১০ জনের দলে পরিণত হন তারা। রন দে ভিককে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন সার্জিও রামোসের জায়গায় সুযোগ পাওয়া নাচো ফার্নান্দেজ। খানিক বাদেই বিব্রতকর হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
এরই সঙ্গে শেষ হলো ইউরোপসেরা টুর্নামেন্টে রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্যে ভরা এক দশকের পথচলা। টানা তিনবারই শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল। এ নিয়ে ৯ মৌসুম পর শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়লেন রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নরা। সেই সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে তাদের বিদায় নিশ্চিত হলো। বিদায় ঘটেছে স্প্যানিশ কাপ কোপা ডেল রে থেকে। স্পেনসেরা লিগ লা লিগা ট্রফির আশাও কার্যত শেষ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে প্রথম লেগে ঘরের মাঠে পরাজয়ের পরও শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার কীর্তি গড়ল আয়াক্স। সবশেষ ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে ইউরোপসেরার মুকুট পরে দলটি। এখন দেখার বিষয় কতদূর যায় নেদারল্যান্ডসের দলটি। এখন পর্যন্ত চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে ঈশ্বরের পুত্রদের।