সৈয়দ খালেদ আহমেদ
বন্ধুর পরামর্শে ক্রিকেটে হাতেখড়ি সৈয়দ খালেদ আহমেদের। ২০১৫ সালের অক্টেবরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে অভিষেক হয় সিলেটের এই পেস বোলারের। জাতীয় লিগের সদ্য শেষ হওয়া রাউন্ডে তার গতিতে বিধ্বস্ত ঢাকা মেট্রো। দুই ইনিংসে ১০ উইকেট শিকার করে সিলেটকে ৩ রানের জয় উপহার দেন ২৬ বছর বয়সী এ পেসার। দলের জয়ে অসাধারণ অবদান রাখায় ক্যারিয়ারে প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন।
ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে ড্রেসিংরুমে ফেরার আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পান খালেদ। দুই পুরস্কারের আনন্দে উচ্ছ্বসিত খালিদ, যুগান্তরকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আল-মামুন।
যুগান্তর: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার এই সুসংবাদটি কখন জানতে পারলেন?
খালেদ: আমি আসলে এখনও রাজশাহীতে আছি। জাতীয় লিগে খেলতেছিলাম। দলের জয়ের অবদান রাখায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছি। এরপর মাঠ থেকে বের হওয়ার আগেই জানতে পারলাম জাতীয় দলে আমাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। শুনে খুব ভালো লাগছে।
যুগান্তর: এটাই কি ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার পেলেন?
খালেদ: হ্যাঁ এটাই আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা। এর আগে হয়তো ভালো খেলেছি। তবে এই ম্যাচের মতো নয়।
যুগান্তর: একই সঙ্গে দুটি পুরস্কার?
খালেদ: সত্যিই খুব ভালো লাগছে। এত আনন্দ আমি এর আগে কখনও পানি। ক্রিকেট খেলা শুরুর পর থেকেই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
যুগান্তর: আপনার পরিবারের কেউ কি খেলাধুলা করে?
খালেদ: আমার পরিবারের কেউই খেলাধুলায় নেই। আমিই খেলাধুলায় আছি। আমাকে দেখে হয়তো ভবিষ্যতে কেউ উঠে আসতে পারে।
যুগান্তর: কার পরামর্শে ক্রিকেটে এলেন?
খালেদ: ২০১২ সালের আগে আমি পাড়ার ক্রিকেটে খেলতাম। তখন আমি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী ছিলাম। তো আমার বন্ধু ইমরান আলী, ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলত। এখনও খেলে। ও আমাকে বলেছে পাড়ায় তো ভালোই খেলিস। টেপটেনিস রেখে এবার ক্রিকেট বলে খেল। দেখবি ভালো করবি। ও আমাকে বলেছে, ক্রিকেট খেলা শুরু কর ভালো করবি।
যুগান্তর: আপনার ক্রিকেটার হওয়া নিয়ে যদি বলেন?
খালেদ: সিলেট থেকেই আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু। সিলেট একাডেমিতে ভর্তি হলাম। এরপর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছি। এরপর সিলেট লিগ, ২০১৫ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার অভিষেক হয়। প্রথম বছর জাতীয় লিগে চার ম্যাচ খেলে ১২ উইকেট নিয়েছিলাম। পরের বছর জাতীয় লিগে দুই ম্যাচ খেলে ৬ উইকেট নিয়েছি। ২০১৭ সালে বিসিএল খেলেছি। সেই বছরই মিজানুর রহমান বাবুল স্যারের অধীনে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলি। উনি আমাকে হাথুরুসিংহের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। উনি তখন বলেছিলেন আমার সঙ্গে থাক। গত বছর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসলে হাথুরুসিংহে আমাকে দলের সঙ্গে করে চট্টগ্রাম নিয়ে যান। এরপর তিনি আমাকে বলেছেন এইচপিতে যাও। এরপর এইচপি দলে ছিলাম। এইচপি দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে গেলাম। তারপর দেশে ফিরে বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলেছি।
যুগান্তর: বিপিএলে অনেক তারকা ক্রিকেটার খেলেছে, বিশেষ করে আপনাদের দলে (ঢাকা ডায়নামাইটসে) অনেক তারকা ক্রিকেটার ছিল, তাদের কাছ থেকে কোনো পরামর্শ পেয়েছেন?
খালেদ: কুমার সাঙ্গাকারা অনেক ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। কায়রন পোলার্ড বলেছেন, সাহস নিয়ে খেলবে দেখবে ভালো করবে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।
যুগান্তর: আপনার উঠে আসার পেছনে হাথুরুসিংহের অবদান আছে?
খালেদ: হ্যাঁ, বলতে পারেন। উনি আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরামর্শেই আমি গত দুই বছর এইচপিতে ছিলাম। সবশেষ শ্রীলংকা এ দল বাংলাদেশ সফরে আসলে তাদের সঙ্গে খেলেছি। এরপর আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়েছি। সবশেষ এশিয়া কাপের প্রাথমিক ৩০ সদস্যের দলেও ছিলাম। এখন জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি।
যুগান্তর: টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে খেলার আগেই সরাসরি টেস্ট দলে ডাক পাওয়া কতটা সৌভাগ্যের?
খালেদ: আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, সরাসরি টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছি। বলা হয়ে থাক টেস্টই মর্যাদার ক্রিকেট। সেখানে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। অবশ্যই চেষ্টা করব নিজের সেরাটা খেলতে।
যুগান্তর: ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই কি পেস বোলিং করছেন?
খালেদ: আমি যেদিন থেকেই ক্রিকেট খেলছি, সেদিন থেকেই পেস বোলিং করছি। বোলিংয়ে সফল হওয়াই আমার টার্গেট।
যুগান্তর: কার খেলা অনুসরণ করেন, কে আপনার রোল মডেল?
খালেদ: দেশে যদি বলেন, তাহলে মাশরাফি ভাই। আর বিদেশে জেমস অ্যান্ডারসনকে ফলো করি।
যুগান্তর: কার মতো হতে চান?
খালেদ: আমি আমার মতোই হতে চাই। বাংলাদেশ দলকে ডোমিনেট করব সেটাই। আমার চাওয়া। জাতীয় দলে লম্বা সময় সার্ভিস দিতে চাই, এটাই আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য।
যুগান্তর: ক্রিকেট খেলার জন্য কখনও প্রতিবন্ধকার শিকার হতে হয়েছে?
খালেদ: না, আমার পরিবার থেকে তেমন কোনো বাধানিষেধ ছিল না। আমরা পাঁচ ভাই। সবাই আমাকে হেল্প করে।