নিরব-জোবায়েরদের মাঝেই বেঁচে থাকবেন হকির ‘ওস্তাদ ফজলু’
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
ওমর ফারুক রুবেল
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
![নিরব-জোবায়েরদের মাঝেই বেঁচে থাকবেন হকির ‘ওস্তাদ ফজলু’](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/01/20/Ostad-Fozlu-678dd47b63425.jpg)
নিজের বাসার ছাদে শেখাতেন হকি। আরমানিটোলা স্কুলেও গড়ে তুলেছিলেন একটি হকি একাডেমি। ছোট বাচ্চাদের হাতে স্টিক তুলে দিয়ে কীভাবে খেলতে হয়, তা হাতে-কলমে শিক্ষা দিতেন। পুরান ঢাকার কিংবদন্তি ওস্তাদ ফজলুর (ফজলুল ইসলাম) কাছে হাতেখড়ি হয়েছে দেশের প্রতিষ্ঠিত অনেক হকি তারকার।
গত বছর পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন ওস্তাদ ফজলু। তাই বলে থেমে থাকেনি তার একাডেমির সাফল্য। তার দুই শিষ্য রাব্বি হোসেন নিরব ও জোবায়ের রহমান এবার বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) হকি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাডেমির অন্যতম কোচ সেলিম লাকি। তার কথায়, ‘ওস্তাদ নেই। কিন্তু তার একাডেমি রয়েছে। সেই একাডেমি থেকে এবার দুটি ছেলে বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়েছে। এই ছেলেদের মাঝেই ওস্তাদ বেঁচে থাকবেন।’
১৯৭৭ সালে ঢাকার প্রথম বিভাগ হকি লিগে সরাসরি খেলার সুযোগ আসে ফজলুল ইসলামের। ১৯৮৪ সালে লিগে ভিক্টোরিয়া-ঊষার ম্যাচে চোখের ওপর লাগে স্টিকের আঘাত। গুনে গুনে ১৩টি সেলাই। সেই চোটের কারণেই পরে কখনো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাতে পারেননি ফজলুল ইসলাম।
তবে একে শেষ না ধরে নতুন এক মিশনে নেমে পড়েন। জাতীয় দলে না খেলার দুঃখ ঘোচাতে নেমে পড়েন খেলোয়াড় তৈরিতে। গড়ে তোলেন ওস্তাদ ফজলু হকি একাডেমি। জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমি, নাঈম উদ্দিন, মো. আরশাদ ও ইমরান হাসান ওস্তাদ ফজলুর হাত ধরেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন।
শুধু এ চারজনই নন, খেলোয়াড় তৈরির কারিগর ফজলুর হাত ধরে জাতীয় দল ও যুব দলে নাম লিখিয়েছেন ২০ জনের মতো খেলোয়াড়। তাদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম কামাল, মাকসুদ আলম হাবুল, আবদুস সাজ্জাদ, ইমন, পিন্টুও রয়েছেন।
ওস্তাদ ফজলুর মৃত্যুর পর সেই একাডেমির হাল ধরেছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ আজিজুল্লাহ হায়দার, আম্পায়ার সেলিম লাকি এবং সাবেক তারকা খেলোয়াড় মাকসুক আলম হাবুল, শওকত আলী, ইসমাইল হোসেন লিটনরা। এলাকাবাসী ও নিজেদের খরচে শতাধিক খুদে খেলোয়াড়কে দুবেলা অনুশীলন করিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সেলিম লাকির কথা, ‘বিভিন্ন টুর্নামেন্ট হলে আমাদের বল, স্টিক ও জার্সি দিয়ে সহযোগিতা করেন একাডেমির উপদেষ্টা কামরুল ইসলাম কিসমত, হাজী মনোয়ার, রফিকুল ইসলাম কামাল, তারেক এএ আদেল ভাই। শান্টা ভাইও সহযোগিতা করছেন আমাদের।’
এই একাডেমি থেকে বিকেএসপিতে সুযোগ পাওয়া রাব্বি হোসেন ও জোবায়ের সম্পর্কে লাকির কথা, ‘ওস্তাদ মারা যাওয়ার পর ছোট ছেলেদের আমরা হাতে-কলমে শিক্ষা দিচ্ছি। সফল হতে পেরেছি কি না জানি না। তবে রাব্বি হোসেন নিরব ও জোবায়ের রহমান বিকেএসপিতে সুযোগ পাওয়ায় মনে হচ্ছে ওস্তাদের দায়িত্ব কিছুটা হলেও আমরা পালন করতে পারছি।’
দেশের একমাত্র ক্রীড়া বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়ে আনন্দিত রাব্বি হোসেন নিরব, ‘বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়েছি, খুব ভালো লাগছে। আমার খুব মনে পড়ছে ওস্তাদকে (ফজলুল ইসলাম)। আজ ওস্তাদ বেঁচে থাকলে আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। আল্লাহ ওস্তাদকে জান্নাতবাসী করুন। যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ওস্তাদ আমার হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’