জাতীয় নাগরিক পার্টিতে মুনতাসিরের পদ নিয়ে সমালোচনার ঝড়

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১১:২১ পিএম

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে জায়গা পেয়েছেন মুনতাসির মামুন; যার বিরুদ্ধে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটেছে শুক্রবার। অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করা তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে এনসিপির আহ্বায়ক করে ১৭১টি পদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই কমিটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
নতুন রাজনৈতিক দলের কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন মুনতাসির মামুন নামে এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি পশ্চিমা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় যেমন- গে, লেসবিয়ান, বা সমকামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে রাজনৈতিকভাবে কাজ করবেন; এমন সন্দেহ পোষণ করছেন অনেকেই। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। মুনতাসিরের মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নাগরিক পার্টিতে পদ দেওয়ায় বইছে সমালোচনার ঝড়। নেটিজেনরা ধারণা করছেন, বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশে সমকামিতা উসকে দিতে এমন ব্যক্তিকে নাগরিক পার্টিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই নতুন রাজনৈতিক দলের এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক খোমেনী ইহসান এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ছাত্রশিবির ও জামায়াতকে অবশ্যই জাতীয় নাগরিক পার্টির বিষয়ে জবাবদিহি করা দরকার। তাদের দলীয় লোকজন এই দলে আছে, গতকাল বেশির ভাগ লোক ছিল জামায়াত ও শিবিরের। এখন সমকামী ইস্যু তৈরি হওয়ায় এর দায় জামায়াত-শিবির কিভাবে এড়াবে? পুরো ব্যাপারটা পশ্চিমা ইসলামপন্থিদের মতোই। তারা যেভাবে চুপ করে মেনে নেয়, তেমনটাই বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি সেক্রেটারি লেভেলের লোক নাগরিক পার্টিতে আছে, তারা কিন্তু সেভাবে সরব নয়। আবার পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির কথা বলে জামায়াতকেই কটাক্ষ করা হলো, জামায়াত-শিবিরের জনশক্তি তা মুখ বুঝে শুনলো।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ডা. আসিফ সৈকত তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, আবু সাঈদরা কি কাওমে লুত তথা এলজিটিভি মতাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য শহিদ হয়েছেন? নাগরিক পার্টিতে গে অ্যাক্টিভিস্ট মুনতাসির মামুনকে পজিশন দেওয়া হয়েছে। তিনি হোচিমিনসহ দেশের অন্যান্য এলজিটিভি অ্যাক্টিভিস্টিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। আন্দোলনের সময় হোচিমিন শেখ হাসিনার পক্ষ নেয়, কিন্তু মুনতাসির ফ্যাসিবাদ বিরুদ্ধে সমর্থন দেয়। এটা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় এই ভেবে যে, হোচির জন্য এলজিটিভি অ্যাক্টিভিজম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, ইলগা-এশিয়া (ILGA) হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে এলজিটিভি নেটওয়ার্ক; যেখানে ২০০০+ এনজিও জড়িত, বাংলাদেশের ৮টির মতো এনজিও যুক্ত। ফেসবুক পেজ এবং ইমেলের মাধ্যমে দেশের সব অ্যাক্টিভিস্টের কাছে বিচার দেয়। একজন ব্যক্তিগত লাইফে বেডরুমে কে কী করছে তা নিয়ে ভাবিত নই। কিন্তু ২০০০ শহিদ এবং প্রায় ৩০ হাজার আহতের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্বে এসেছে গে অ্যাক্টিভিস্ট। ৯০ শতাংশের মুসলিমের দেশে ইসলামিক মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দেওয়ার জন্য কি ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে?
মুনতাসিরের গে অ্যাক্টিভিটিজের বেশি কিছু ছবি প্রকাশ করে পৃথক আরেক স্ট্যাটাসে ডা. আসিফ বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মুনতাসির গে বা সমকামী। আমি এ কমিটিকে তীব্র এবং তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করলাম। তাদের ফান্ডিং এসেছে কয়েকশো মিলিয়ন ডলার। কেন রাখাল রাহার বিচার হচ্ছে না, কেন ইসলাম অবমাননা হচ্ছে- ক্লিয়ার?
ওরা সব বিক্রি হয়ে গেছে, ওরা জাতির সঙ্গে শহিদের বিচারের নামে মশকরা করে কালক্ষেপণ করলো। সব ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের বীজ বুনে দিলো। মুনতাসির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করো।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাজ্জাদ শরীফ বলেন, বিতর্কিতদের না রাখাই ভালো। শুরুতেই কালিমা লেগে গেল।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মিজান রহমান এক স্ট্যাটাসে বলেন, Alexander Soros হলেন মার্কিন বিলিয়নিয়ার George Soros এর ছেলে। ওদের আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম হচ্ছে Saros Foundation. এই George Soros এর আর্থিক সহায়তা নিয়ে সারা বিশ্বে সমকামীদের মুভমেন্ট চলছে।

২০১৬ সালে আমেরিকার আয়কর ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী জর্জ সারোস ২.৭ মিলিয়ন ব্যয় করেছেন শুধুমাত্র সমকামীদের অধিকার রক্ষার নামে বিভিন্ন দেশে আন্দোলন করার জন্য! এসব মুভমেন্ট সমকামীদের জন্যে উনি সরাসরি ইনভেস্ট করে থাকেন সারোস ফাউন্ডেশন থেকে!উনার ছেলের সঙ্গেই সখ্যতা হয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ নেতা মুনতাসীর রহমানের; যে নিজেই একজন সমকামী। গণঅভ্যুত্থানের সময় সমকামী মুনতাসীর সমন্বয়ক হান্নানসহ বাকিদের গোয়েন্দাদের নজরদারি থেকে বাঁচাতে এই Soros Foundation এর অফিসে নিয়ে যায়। সেখানেই তারা আশ্রয় নিয়েছিল। সেখান থেকেই ওরা ভিডিও বার্তা প্রেরণ করত!(হান্নান নিজেই এ ঘটনা ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছিল।)
কাজেই যারাই জাতীয় নাগরিক পার্টিতে সমকামী নেতা মুনতাসীরের শীর্ষ পদ পাওয়াকে ‘অনিচ্ছকৃত ভুল হয়েছে’- বলে ভন্ডামি টাইপ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, এরা হচ্ছে আসল বাটপার।
হাসনাত-সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে আর বাটপারি করা যাবে না। মার্কিন ডলার পাবার নেশায় আমাদের ইসলামি কালচার লালন করা দেশে রাজনীতির আড়ালে সমকামীতাকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছো তোমরা। এটাই বাস্তবতা। এটাই সত্য।
স্ট্যাটাসে অ্যালেজন্ডার সরোসের সঙ্গে তোলা সমন্বয়কদের একটি ছবিও প্রকাশ করেছেন ডা. মিজান।
হাবিবুল বাশার নামে এক ব্যক্তি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে গে অ্যাক্টিভিস্ট মুনতাসির মামুনকে দ্রুত অপসারণ করে নিজেদের জায়গা ঠিক রাখুন।
এদিকে মুনতাসির মামুন ইস্যুতে নিজেদের ভুল স্বীকার করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।
তারা বলছেন, দেশের মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করে কোনো রাজনীতি তারা কখনও করবেন না। ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি তাদের রাজনীতিতে কখনও জায়গা পাবে না। যা হয়েছে, সেটা ছিল অনিচ্ছাকৃত ভুল। তারা এ ধরনের ভুল সংশোধন করে নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।