|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আবুল ফজল শিক্ষকতা ও সাহিত্যসাধনার পাশাপাশি সমাজবিকাশের কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সব ধরনের অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সময়োচিত লেখা আবুল ফজলকে সমাজের যথার্থ অভিভাবক ও বিবেকের মর্যাদা দিয়েছে। ১৯০৩ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামে তার জন্ম। আবুল ফজলের শিক্ষাজীবন শুরু মাদ্রাসায়।
বাবার অর্থনৈতিক অনটনের কারণে এক সময় আবুল ফজলকে অন্যের বাড়িতে জায়গির থাকতে হয়েছিল। দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় নিজের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে চট্টগ্রামের এক বইয়ের দোকানের মাধ্যমে কলকাতা থেকে নজরুলের ‘অগ্নিবীণা’ ও ‘ব্যথার দান’ আনিয়েছিলেন আবুল ফজল। যখন এ খবর ছড়িয়ে পড়ল, তখন ছাত্র-শিক্ষক সবাই বিস্ময়ে হতবাক। কারণ ওই সময় কোনো মাদ্রাসাশিক্ষার্থী কলকাতা থেকে এমন বই আনাতে পারে, তা ছিল রীতিমতো অকল্পনীয় বিষয়।
তিনি ১৯২৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩১ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করে ১৯৪১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর কলেজে বাংলা বিষয়ের লেকচারার পদে যোগদান করেন। সেখান থেকে ১৯৪৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে বদলি হন এবং সেখান থেকেই ১৯৫৬ সালে অধ্যাপক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।
জাতির বিভিন্ন সংকটকালে তার নির্ভীক ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাঙালি জাতির প্রতি ছিল তার গভীর মমত্ববোধ। তিনি যখন চট্টগ্রাম কলেজে শিক্ষক হিসাবে কর্মরত, তখন দেশজুড়ে বইছিল ভাষা আন্দোলনের হাওয়া। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে চট্টগ্রামে আবুল ফজলের ভূমিকাও ছিল অগ্রগণ্য। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তার বিখ্যাত উক্তি ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ তো চিরকালই প্রেরণা জুগিয়েছে বাঙালিকে। ১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে যোগদান করেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসাবে শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
আবুল ফজল উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, আত্মকথা, ধর্ম, ভ্রমণকাহিনি ইত্যাদি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেন। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো : চৌচির, প্রদীপ ও পতঙ্গ, মাটির পৃথিবী, বিচিত্র কথা, রাঙ্গা প্রভাত, রেখাচিত্র, দুর্দিনের দিনলিপি প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬), নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৮০), মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১) এবং আবদুল হাই সাহিত্য পদকে (১৯৮২) ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯৮৩ সালের ৪ মে চট্টগ্রামে তার মৃত্যু হয়।
