
প্রিন্ট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
শক্তিমান অভিনেতা ও টেলিভিশন প্রযোজক মোহাম্মদ জাকারিয়া ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সেকেড্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আলী। মোহাম্মদ জাকারিয়া শৈশবেই কুরআন তিলাওয়াত শিখেছিলেন। জন্মস্থানের একটি মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। বাবার ইচ্ছা ছিল তাকে তিনি কুরআনে হাফিজ করে তুলবেন। কিন্তু মায়ের ইচ্ছায় মল্লারপুর ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। পরে বীরভূম জেলার সিনিয়র বেণীমাধব ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করেন। আইএ ক্লাসে ভর্তি হন হেতমপুর কলেজে।
শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটিয়ে রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে চাকরি গ্রহণ করেন। ওই অফিসের সহকর্মী অশোক মজুমদার ও অমর গাঙ্গুলির উৎসাহে শম্ভু মিত্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে। অভিনয়শিল্পের প্রতি মোহাম্মদ জাকারিয়ার ছিল সহজাত আকর্ষণ। ওই সময় মুসলিম পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রে সচরাচর এমনটি দেখা যেত না। ১৯৪৪ সালে শম্ভু মিত্র প্রযোজিত বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে মোহাম্মদ জাকারিয়া অভিনেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরে থিয়েটার সেন্টার, লোকনাট্যম ইত্যাদি নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থেকে বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেন। তিনি ‘বহুরূপী’ নামে একটি নতুন নাট্যসংস্থা গঠনেও বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। এই নাট্যদলের সঙ্গে তিনি দিল্লি ও ঢাকায় নাট্য সফরে যান এবং এ নাট্যদলে অভিনয় করার মাধ্যমেই সমগ্র ভারতে খ্যাতিলাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি কলকাতার থিয়েটার সেন্টার নাট্যদলে অভিনেতা ও নাট্যশিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। থিয়েটার সেন্টারে ‘অঘটন আজও ঘটে’ নাটকে তার অভিনয় দেখে লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে সোনার আংটি উপহার দেন।
১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর মোহাম্মদ জাকারিয়া তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশে) এসে জহির রায়হানের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ঢাকা টেলিভিশনের প্রযোজক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে তিনি যোগ দেন দেশের বিখ্যাত নাট্যগোষ্ঠী থিয়েটারে। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও তিনি। ১৯৮১ সালে তিনি টেলিভিশনের সরকারি চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন।
চল্লিশের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত নাট্যাভিনয়ের ক্ষেত্রে মোহাম্মদ জাকারিয়া একটি পরিশীলিত ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-নবান্ন, অঘটন আজও ঘটে, রক্তকরবী, সুবচন নির্বাসনে, চারিদিকে যুদ্ধ, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, দুই বোন, সেনাপতি, ওথেলো, এখানে এখন, ম্যাকবেথ, এখনও ক্রীতদাস ইত্যাদি। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে-পথিক, বাহানা, বেগানা, বেহুলা ইত্যাদি। সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়া তিনি শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী সম্মাননা পদক, টেনাশিসাস পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী তার স্মরণে ১৯৯৭ সালে ‘মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক’ প্রবর্তন করে।
মোহাম্মদ জাকারিয়া ১৯৯৩ সালের ৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।