খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গীতিকার ও গবেষক আবু হেনা মোস্তফা কামাল ১৯৩৬ সালের ১৩ মার্চ সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ত্রয়োদশ স্থান এবং আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বাংলায় বিএ অনার্স এবং ১৯৫৯ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি লন্ডন থেকে কমনওয়েলথ শিক্ষাবৃত্তিসহ বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং ১৮১৮-১৮৩১ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী। নিয়মিত লিখতেন কবিতা আর গান। স্বদেশপ্রেম, মানবপ্রেম, হৃদয়ের অন্তরঙ্গ অনুভূতি, গভীর আবেগ সব মিলিয়ে আধুনিক শিল্পচর্চার এক পরিশীলিত রূপের দেখা মেলে তার কবিতা ও গানে। প্রবন্ধ, সমালোচনা, গবেষণাধর্মী লেখা-সাহিত্যের এসব ক্ষেত্রেও ভাষা শৈলী, বক্তব্য উপস্থাপন রীতি, রসবোধ ও অনুভূতি প্রকাশে আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছিলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
পঞ্চাশের দশকে ঢাকাকে কেন্দ্র করে সাহিত্য ও সংস্কৃতির যে নতুন ভুবন তৈরি হয়েছিল, আবু হেনা ছিলেন সেই পরিবৃত্তের তরুণ সদস্যদের একজন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি সংস্কৃতিসেবী হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ সহযোগে আবু হেনা ১৯৫৪ সালে ‘পূর্ব বাংলার কবিতা’ নামে একটি সংকলনগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তরুণ বয়সে কবি ও গীতিকাররূপে তার সফল আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’, ‘নদীর মাঝি বলে’, ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা’, ‘এই বাংলার হিজল তমালে’র মতো অসংখ্য গানের রচয়িতা আবু হেনা মোস্তফা কামাল। বিখ্যাত গান ‘সেই চম্পা নদীর তীরে’ আবু হেনারই লেখা। তিনি ঢাকা বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন।
কলেজে শিক্ষকতার মাধমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৬২ সালে তিনি জনসংযোগ পরিদফতরে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসাবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে বাংলা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এবং ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক (১৯৮৯), সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কারসহ (১৯৯১) আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল ১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।