Logo
Logo
×

স্মরণীয়-বরণীয়

প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম

Icon

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ১৯২০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে বরমা হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৪১ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি (অনার্স) এবং ১৯৪৫ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।

আবুল কাশেমের উদ্যোগে ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস। তিনি ছিলেন এর সাধারণ সম্পাদক। এ সংগঠনের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম তিনি বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতিদানের দাবি উত্থাপন করেন। এ লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা : বাংলা না উর্দু’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। এ পুস্তিকায় আবুল কাশেম প্রণীত একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনাও ছিল এবং তাতে ছিল বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম এবং পূর্ব বাংলার অফিস-আদালতের ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবি। তারই উদ্যোগে তমদ্দুন মজলিস ১৯৪৭ সালের ১ অক্টোবর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনে নেতৃত্ব দেয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদই ১৯৪৭ সালের শেষদিকে এবং ১৯৪৮ সালের প্রথমদিকে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করে। ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্বে আবুল কাশেম ছিলেন আন্দোলনের মধ্যমণি। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির পক্ষে ব্যাপক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত প্রথম প্রতিবাদ সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ দেশব্যাপী ধর্মঘট সংঘটনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এ ধর্মঘটের ফলে তদানীন্তন প্রাদেশিক সরকার বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ অ্যাকশন কমিটির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়।

আবুল কাশেম ছিলেন বাংলা সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। তার সম্পাদনায় পত্রিকাটি ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র হিসাবে এই পত্রিকাটি ভাষা আন্দোলনের আদর্শ ও লক্ষ্য প্রচারে সক্রিয় ছিল। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি চালু ছিল।

আবুল কাশেম যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া-বোয়ালখালী নির্বাচনি এলাকা থেকে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি আইন পরিষদে শিক্ষার সব স্তরে বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে চালু করার প্রস্তাব পেশ করেন।

আবুল কাশেম ১৯৬২ সালে ঢাকায় বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এ কলেজ প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলা মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা লাভের দ্বার উন্মুক্ত হয়। তিনি দীর্ঘ উনিশ বছর (১৯৬২-১৯৮১) বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের অপরাপর শাখায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যবইসহ প্রায় একশ গ্রন্থ রচনা করেছেন।

জাতির সেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম অসংখ্য জাতীয় ও সামাজিক পুরস্কার লাভ করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ড পুরস্কার (১৯৬৪), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক (১৯৮৭), ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৮), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৩, মরণোত্তর)। প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ১৯৯১ সালের ১১ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম