বাংলাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী নিলুফার ইয়াসমিন ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম মৌলুদা খাতুন। তিনি ছিলেন তার পাঁচ বোনের ভেতর চতুর্থ। অন্য বোনরা হলেন-বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিন, মেজো বোন ফওজিয়া খান, সেজো বোন নাজমা ইয়াসমীন হক ও ছোট বোন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন মায়ের কাছে সংগীতে হাতেখড়ি। নিলুফার ইয়াসমিন পারিবারিকভাবেই সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে ওঠেন। সংগীতের প্রতি তার অনুরাগ ছিল প্রবল। পরিবারে গানের প্রচলনও ছিল। পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বাবা গান পরিবেশন করতেন আর মা হারমোনিয়াম বাজাতেন। উল্লেখ্য, তার মা মুর্শিদাবাদের স্বনামধন্য ওস্তাদ কাদের বখশের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ভালো গান গাওয়া ছাড়াও ভালো হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন।
নিলুফার ইয়াসমিন বাংলাদেশ বেতারের ছোটদের অনুষ্ঠান খেলাঘরের মাধ্যমে শিল্পী জীবনের শুরু করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিল্পী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হন। উভয় প্রতিষ্ঠানেই তিনি আমৃত্যু একজন নিয়মিত শিল্পী হিসাবে গান গেয়েছেন। রাগসংগীত এবং নজরুল সংগীতের বাইরে তিনি গেয়েছেন অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, টপ্পা, ঠুমরি, কীর্তন, রাগপ্রধান, আধুনিক গান।
নিলুফার ইয়াসমিন ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ২য় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এমএ পাশ করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। একমাত্র পুত্র আগুন বর্তমান প্রজন্মের একজন প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পী।
নিলুফার ইয়াসমিন শ্রোতার আসর প্রযোজিত ও খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘বেলা শেষের রাগিণী’-তে ‘আবার ভালোবাসার সাধ জাগে’ শিরোনামের নজরুল-সংগীতটি রেকর্ড করেন বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রম থেকে। ‘এ কোন সোনারগাঁয়’ রেকর্ডে একটি ও নজরুল ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘পাষানের ভাঙালে ঘুম’ ও ‘বাজলো কিরে ভোরের সানাই’ রেকর্ড দুটিতে দুটি নজরুল-সংগীত গেয়েছেন। এছাড়াও তার কণ্ঠে নজরুল-সংগীত, কীর্তন ও পুরোনো দিনের গানের বেশ কয়েকটি অডিও ক্যাসেট ও সিডি বেরিয়েছে। পুরোনো দিনের গানের গীতিকাররা হলেন চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল ও নজরুল। তিনি বেশকিছু চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে কণ্ঠদান করেছেন। এর ভেতরে উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো ছিল শুভদা, অরুণ-বরুণ-কিরণমালা, জোয়ার ভাটা, আবার তোরা মানুষ হ, সুজন সখী, যে আগুনে পুড়ি, জীবন-তৃষ্ণা, জলছবি ইত্যাদি
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের নজরুল-সংগীতের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন এবং আমৃত্য তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ বারডেম হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।