বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি স্মরণীয় নাম শওকত আকবর। এ দেশের চলচ্চিত্রের প্রায় শুরু থেকে যে কজন ব্যক্তি এই শিল্পের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, তাদের একজন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। তার পুরো নাম সাইদ আকবর হোসেন।
শওকত আকবর ১৯৩৭ সালের ৭ মার্চ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবকাল কেটেছে হুগলিতে। স্কুলজীবনে তিনি হুগলি স্কুলে পড়াশোনা করেন। তার পিতা ছিলেন হুগলির ইসলামিক কলেজের প্রভাষক। স্কুলজীবন থেকেই সিনেমা দেখার পর অভিনয়ের প্রতি অনেকটা আসক্ত হয়ে পড়েন। স্কুলজীবনে তিনি মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। প্রথমে ‘দেবদাস’ নাটকে অভিনয় করেন। তখন তার বয়স ছিল প্রায় ১৫ বছর। সে সময় শওকত আকবর হুগলিতে ছিলেন। ১৯৫০ সালে বর্ধমান জেলায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। ম্যাট্রিক পাশ করেন ১৯৫২ সালে। এর পরের বছর মেডিকেল কলেজে এলএমএফ কোর্সে ভর্তি হন। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ালেখা করার পরও শেষ পর্যন্ত তিনি পেশা হিসাবে অভিনয়কে বেছে নেন এবং বাংলা চলচ্চিত্রের একজন প্রথিতযশা অভিনেতায় পরিণত হন।
১৯৬৪ সালে ‘এই তো জীবন’ ছবির মাধ্যমে রুপালি জগতে প্রবেশ করেন তিনি। শওকত আকবর নায়ক ও সহ-অভিনেতা উভয় চরিত্রেই অভিনয় করে থাকলেও সহ-অভিনেতা হিসাবে বেশি পরিচিত। তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম সহ-অভিনেতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া তিনি বহু ছবিতে রাজার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে তার রাজার চরিত্রে অভিনয় এখনো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত শওকত আকবর বাংলা ও উর্দু মিলিয়ে আড়াইশ ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো-হাঙর নদী গ্রেনেড, বেদের মেয়ে জোসনা, ছুটির ঘণ্টা, অবুঝ মন, তালাশ, আগুন নিয়ে খেলা, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, জীবন থেকে নেয়া, বড় বৌ, মোমের আলো, ফকির মজনু শাহ ইত্যাদি।
বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শওকত আকবর জাতীয় চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালের ২৩ জুন লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। লন্ডনেই মুসলিম কবরস্থানে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।