খন্দকার মোশতাক আহমদ ছিলেন একজন বাংলাদেশি আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯১৮ সালে ত্রিপুরা জেলার (বর্তমানে কুমিল্লা জেলা) দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামে তার মাতুতালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বৃহত্তর যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমায় (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং আইনশাস্ত্রে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম মহাসচিব। খন্দকার মোশতাক ১৯৪২ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি আহমেদ যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৩ সালের আর্টিকেল ৯২-এ ব্যবহার করে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দিলে ১৯৫৪ সালে তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি মুক্ত হয়ে আবার সংসদে যুক্তফ্রন্টের চিফ হুইপ হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করার পর তিনি আবার বন্দি হন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফার সমর্থন করায় তাকে আবার কারাবরণ করতে হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারে তিনি পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারে তিনি বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে তাকে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বাকশালের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তার দায়িত্ব গ্রহণের পরদিনই কথা বলেন। তিনি ঘোষণা করেন-সবার প্রতি বন্ধুত্ব এবং কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়, এই নীতির রূপরেখার মধ্যে আমরা শান্তি ও প্রগতির প্রতি আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখব। ১৫ আগস্ট পাকিস্তান খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বাধীন নতুন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নেয়। সৌদি আরব ও সুদান বাংলাদেশ ও তার নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় বলে খবর প্রকাশিত হয় ১৭ তারিখের পত্রিকায়।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী রাউলিং ১৬ আগস্ট সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন। ব্রিটেন, জর্ডান, জাপান ও বার্মার স্বীকৃতির খবর ছাপা হয় ১৯ তারিখের পত্রিকায়। ২০ আগস্টের পত্রিকায় ছাপা হয় ইরান ও কাতারের স্বীকৃতির খবর। ২১ আগস্টের পত্রিকায় প্রকাশিত হয় আরও সাতটি দেশের স্বীকৃতির খবর। যুগোস্লাভিয়াসহ আরও আটটি দেশের স্বীকৃতির খবর প্রকাশিত হয় ২২ আগস্টের পত্রিকায়।
খন্দকার মোশতাক আহমদ ১৯৯৬ সালের ৫ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।