Logo
Logo
×

স্মরণীয়-বরণীয়

মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ

Icon

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ ছিলেন ফারসি সাহিত্য-দর্শন এবং ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একজন অনুরাগী পাঠক, যা তার বিভিন্ন রচনায় ফুটে উঠেছে। তিনি ১৮৯৮ সালের ২ মার্চ পাবনা জেলার শাহজাদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী আজম আলী ছিলেন একজন কবিরাজি চিকিৎসক। মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ শাহজাদপুর হাইস্কুল এবং রাজশাহী কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) ও প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এমএ (দর্শন) এবং আইন পরীক্ষায় (১৯২২) পাস করেন। পরে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি চাকরিজীবনে প্রবেশ করে একে একে আয়কর অফিসার (১৯২৩), ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (১৯২৪), ম্যাজিস্ট্রেট (১৯৩০), সাব-ডিভিশনাল অফিসার (১৯৩৬) এবং কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সহকারী সেক্রেটারি (১৯৪৪) হন। পাকিস্তান হওয়ার পর তিনি ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (১৯৪৮-৫১) এবং পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারির (১৯৫১-৫৫) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে এ পদ থেকে অবসরগ্রহণের পর একই বছরের ৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর বিশেষ কর্মকর্তা (পরিচালক) তথা প্রধান নির্বাহী হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।

মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত থাকলেও তিনি একজন সৃজনশীল গদ্যশিল্পী ছিলেন। বাংলা ভাষায় দার্শনিক ও চিন্তামূলক প্রবন্ধ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। আধুনিক বাঙালি মুসলমান লেখকদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম দার্শনিক ভাবনাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো : ‘পারস্য প্রতিভা’ (২ খন্ড ১৯২৪, ১৯৩২), ‘মানুষের ধর্ম’ (১৯৩৪), ‘কারবালা ও ইমাম বংশের ইতিবৃত্ত’ (১৯৫৭), ‘নয়া জাতির স্রষ্টা হযরত মুহম্মদ’ (সা.) (১৯৬৩), ‘বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ধারা’ (১৯৬৯) ইত্যাদি। দর্শনের বিভিন্ন দুরূহ বিষয় সাবলীল বাংলা গদ্যে প্রকাশ করে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ‘পারস্য প্রতিভা’য় তিনি ইরানের খ্যাতনামা কবিদের জীবনী ও তাদের সাহিত্যকর্ম, ফারসি সাহিত্যের প্রেক্ষাপট, সুফিমত ও বেদান্ত দর্শন এবং ‘মানুষের ধর্মে’ জগৎ ও জীবন, ইহলোক ও পরলোক, জড়প্রকৃতি ও মনোজগৎ, জীবনপ্রবাহ ও আত্মা ইত্যাদি দুরূহ তত্ত্ব ক্লাসিক্যাল বাংলা গদ্যে উপস্থাপন করে গেছেন।

তিনি প্রবন্ধ সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০) ও দাউদ পুরস্কার (১৯৬৩) লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬২) পদক এবং প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অফ পারফরমেন্স (১৯৭০) সম্মানে ভূষিত হন। তিনি ১৯৭৪ সালের ২ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম