Logo
Logo
×

স্মরণীয়-বরণীয়

ড. আশরাফ সিদ্দিকী

Icon

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যেসব সাহিত্যিক, ড. আশরাফ সিদ্দিকী তাদের একজন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার ও লোকগবেষক। তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি পাঁচশ’রও বেশি কবিতা রচনা করেছেন। গবেষণা করেছেন বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে। আশরাফ সিদ্দিকী ১৯২৭ সালের ১ মার্চ তার নানাবাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুস সাত্তার সিদ্দিকী ছিলেন একজন শৌখিন হোমিও চিকিৎসক এবং ইউনিয়ন পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। আর মা সমীরণ নেসা ছিলেন স্বভাব কবি। আশরাফ সিদ্দিকী তার নানাবাড়ির পাঠশালায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। দ্বিতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তার বাবার প্রতিষ্ঠিত রতনগঞ্জ মাইনর স্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথম কবিতা লেখেন ‘নববর্ষা’। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে। সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালীন তার কবিতা ‘স্বগত’ ও ‘পূর্বাশা’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ সময় তিনি কিছু আঞ্চলিক বাংলা ধাঁধা সংগ্রহ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পাঠান। রবীন্দ্রনাথ তার প্রশংসা করেন। এর কিছুদিন পর তিনি শান্তিনিকেতনে পড়ার জন্য ভারতে যান। ১৯৪৭ সালে শান্তিনিকেতনে বাংলায় অনার্স পড়াকালীন দেশবিভাগ হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন। অনার্স কোর্সে বাংলা সাহিত্যে তিনি সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হন। তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে দ্বিতীয়বার এমএ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে লোকসাহিত্যে পিএইচডি করেন। ড. আশরাফ সিদ্দিকী ১৯৫০ সালে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫১ সালে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন রাজশাহী সরকারি কলেজে। ওই বছর নভেম্বরে ডেপুটেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে আবার ফিরে যান রাজশাহী কলেজে। তিনি ১৯৫৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বদলি হয়ে ঢাকা কলেজে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে কিছুদিন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৮ সালে দায়িত্ব পান তদানীন্তন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালকের। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ডিসট্রিক্ট গেজেটিয়ারের প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ছয় বছর বাংলা একাডেমির দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন। জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকসাহিত্য বিষয়ে পড়াকালীন তিনি রচনা করেন শিশুতোষ রচনা ‘সিংহের মামা ভোম্বল দাস’, যা ১১টি ভাষায় অনূদিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের লোকসাহিত্য নিয়ে লেখেন লোকসাহিত্য প্রথম খণ্ড। এরই ধারাবাহিকতায় কিংবদন্তির বাংলা, শুভ নববর্ষ, লোকায়ত বাংলা, আবহমান বাংলা, বাংলার মুখ ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ড. আশরাফ সিদ্দিকীকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৪), রিডার্স ডাইজেস্ট পুরস্কার (১৯৬৪), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৬) ও একুশে পদকে (১৯৮৮) ভূষিত করা হয়। তিনি ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম