ব্যাংক লুটেরাদের আইনের আওতায় আনা হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩১ পিএম
ব্যাংক লুটেরা ও অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান।
একই সঙ্গে ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমানের মতো এনবিআরে আর যেন দুর্বৃত্ত বা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়মমাফিক পদোন্নতি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৩৬০ ডিগ্রি মূল্যায়ন করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে আয়কর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। এ সময় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কালোটাকা, এনবিআরের দুর্নীতি, সংস্কার, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে যারা লুটপাট ও অর্থ পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থ পাচার নিয়ে বিএফআইইউ কাজ করছে, এনবিআরের সিআইসিও কাজ করবে। হয়তো একটু সময় লাগবে। প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবকিছু স্থির হলে কাজ শুরু করব।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, বড়-ছোট নয়, সবাইকে শক্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে। যদি তারা নিজেদের পরিবর্তন করতে না পারে তাহলে তারা থাকবে না। আর যেন দুর্বৃত্ত বা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। আমরা সিভিল সার্ভেন্টরা ভুলে গেছি, আমাদেরও মাস্টার আছে। সেই মাস্টার হলো জনগণ। অন্তত কোটাবিরোধী আন্দোলন নতুন করে সেটি মনে করিয়ে দিয়েছে। তাই কর্মকর্তাদের আইনবিধি মেনে জনগণের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান বলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো এটা অত্যন্ত অশোভন কাজ, অগ্রহণযোগ্য। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে দুর্নীতিকে স্বীকার করে নিচ্ছি। এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটার বিরোধিতা করি।
রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি সম্পর্কে আব্দুর রহমান খান বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত কম। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়েও পিছিয়ে আছি আমরা। করজাল বাড়ানো যায়নি বিধায় এমনটি হয়েছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ২ শতাংশ করের আওতায় আছে। যেটুকু করজাল বাড়ানো গেছে সেটিও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, কলমের খোঁচায় জোর করে বাড়ানো হয়েছে। করজাল বাড়াতে উন্নত বিশ্বের মতো কর শিক্ষণের জোর দেওয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যপুস্তকে কর সংক্রান্ত গল্প অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, রাজস্ব আদায় প্রকৃত তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিজিএ হিসাবের সঙ্গে এনবিআরের হিসাবের মিল নেই। অসামঞ্জস্য দূর করতে ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায়ে সিজিএ হিসাবে আমলে নেওয়া হবে বলে কর্মকর্তাদের জানান তিনি।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে আবদুর রহমান খান বলেন, জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী নিয়মমাফিক সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। বঞ্চিতদের দ্রুত পদোন্নতি দেওয়া হবে। পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ৩৬০ ডিগ্রি মূল্যায়ন করা হবে। শুধু বসকে খুশি করবেন তা হবে না। অধীনস্থ কর্মচারী ও জনগণের সঙ্গে আচার-ব্যবহার, কাজের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রতিটি কর্মকর্তাকে মূল্যায়ন এবং সে অনুযায়ী পদায়ন করা হবে।
রাজস্বনীতি বিনিয়োগের অন্তরায় হিসাবে কাজ করে উল্লেখ করে আব্দুর রহমান খান বলেন, নীতির ধারাবাহিকতা ও আইনের শাসন না থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। আমাদের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করলেও সেখানে বিনিয়োগ আসছে না। ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন করলে বিনিয়োগকারীদের পরিকল্পনা করতে সমস্যা হয়। রাজস্বসংক্রান্ত ৩টি আইন আধুনিকায়নে ৩টি টাস্কফোর্স করা হবে; ব্যবসায়ী ও কর কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।