Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জেনেক্স ইনফোসিস মালিকের কর ফাঁকি

আয়কর বিভাগ থেকে নোটিশ পাঠালেও জবাব দেননি কর্ণধাররা

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জেনেক্স ইনফোসিস মালিকের কর ফাঁকি

ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিসের কর্ণধাররাই আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা কোটি টাকা লেনদেন করলেও আয়কর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। আয়কর বিভাগ থেকে তাগাদা দিলেও তারা কর্ণপাত করেননি। আবার কেউ রিটার্ন জমা দিলেও প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির তথ্য প্রদর্শন করেননি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগও আছে।

কোম্পানির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম, তিনি বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসির পরিচালক। তার বাবা চৌধুরী ফজলে ইমাম প্রতিষ্ঠানটির একজন পরিচালক। ফজলে ইমাম ২০২২ সালে এনবিআর-এর সঙ্গে ইএফডি মেশিন বসানোর চুক্তি স্বাক্ষর করেন। শেয়ারবাজারে কোটি টাকা লেনদেন রয়েছে। অথচ তিনি আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ৫ মে উত্তরার ঠিকানায় কর অঞ্চল-৫-এর সার্কেল ৯৬ থেকে ফজলে ইমামকে নোটিশ পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, আয়কর আইনের ১৭৭ ধারা অনুযায়ী ২০২৩-২৪ করবর্ষে রিটার্ন জমা দেননি। এ সময় প্রদেয় কর পরিশোধ এড়িয়ে গেছেন এবং ফাঁকি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য, দলিলাদি ও রেকর্ড সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে কেন জরিমানা করা হবে না, এর উপযুক্ত জবাব দিতে ২৮ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এক মাস পার হলেও অদ্যাবধি ফজলে ইমাম রিটার্ন জমা দেননি। রিটার্ন না দেওয়ার তালিকায় আরও আছেন ফজলে ইমামের মেয়ে জাহারা রসুল, আদনান ইমামের স্ত্রী নাদিয়া মমিন ইমাম এবং নাসরিন আলী।

তথ্যমতে, লোকবলের অভাবে ২০২২ সালে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের সঙ্গে ইএফডি মেশিন বসানোর চুক্তি করে এনবিআর। এর আওতায় ইএফডি যন্ত্র আমদানি, দোকানে বসানো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। চুক্তির আওতায় আগামী পাঁচ বছরে তিন লাখ ইএফডি বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে ইএফডি মেশিন বসাবে। বিনিময়ে প্রতি ১০০ টাকা ভ্যাট আদায় করে ঢাকায় ৫২ পয়সা এবং চট্টগ্রামে ৫৩ পয়সা কমিশন পাবে।

মাঠ পর্যায়ের তথ্য বলছে, চুক্তির দেড় বছর পার করলেও জেনেক্স ইনফোসিস ইএফডি মেশিন বসানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারেনি। রাজধানীর কিছু দোকানে ইএফডি মেশিন বসানো হলেও তা ব্যবহার করতে চান না ক্রেতা-বিক্রেতারা। কিছু মেশিন নষ্ট হয়ে গেলেও মেরামত করা হচ্ছে না।

আয়কর আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে রিটার্ন জমা না দিলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আগে রিটার্ন জমা দিয়েছেন-এমন ব্যক্তিদের পূর্ববর্তী বছরের নিরূপিত করের ৫০ শতাংশ অথবা ন্যূনতম এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে জরিমানা দিতে হবে। আইনে আরও আছে, প্রত্যেক নিবাসী করদাতাকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত সব ধরনের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী জমা দিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিদেশের সম্পত্তির ন্যায্য বাজার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসাবে আরোপ করতে পারবে আয়কর বিভাগ। পাশাপাশি আয়কর বিভাগ থেকে নোটিশ করার পরও তথ্য না দিলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আলোচ্য ক্ষেত্রে ফজলে ইমাম যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইপিই গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় আয়কর রিটার্নে বিদেশে রক্ষিত সম্পদের ঘোষণা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ বিষয়ে মতামত জানতে জেনেক্স ইনফোসিসের জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান ইম্প্যাক্ট পিআরকে ৭ জুলাই লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়। ১০ জুলাই পর্যন্ত জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উত্তর পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ৮ জুলাই জেনেক্স ইনফোসিসের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স আবু জাহিদ পরাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ১০ জুলাই পর্যন্ত তিনিও যোগাযোগ করেননি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া জেনেক্স ইনফোসিসের অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। ইএফডি মেশিন বসানোর খবরে শেয়ারবাজারে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারের দাম হুহু করে বাড়তে থাকে। ফজলে ইমামের মেয়ে জাহারা রসুল ও জামাতা আমের রসুল প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করলেও আয়কর রিটার্নে তারা সেটি দেখায়নি। অন্যদিকে জেনেক্স ইনফোসিসেস চেয়ারম্যান আদনান ইমামের স্ত্রী নাদিয়া মমিন ইমাম ও নিলুফার ইমাম প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। এর আগে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নিরীক্ষায় জেনেক্স ইনফোসিসের বিরুদ্ধে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা উৎসে ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আপত্তি না জানিয়ে ভুল স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং দাবিকৃত ভ্যাট পরিশোধ করে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম