এক বছরে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের প্রতিষ্ঠান নিটল মোটরস প্রায় ৩৬৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। গাড়ি বিক্রয়, যানবাহন পরিচালনায় আয়, কেনাকাটা ও স্থান-স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে নিয়মিত ভ্যাট পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অডিট রিপোর্ট, দাখিলপত্র নিরীক্ষা করে এই ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট।
সূত্র জানায়, দুই দফা নিটল মোটরসের দলিলাদি নিরীক্ষা করা হয়। নিরীক্ষায় চার ধরনের অনিয়ম পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে- ক্রয় ও বিক্রয়ের রেজিস্টার যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করা, স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত উপকরণ ক্রয় রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ ছাড়া সরবরাহ করা, উৎসে মূসক যথাযথভাবে কর্তন না করা, পণ্য ও সেবা সরবরাহের বিপরীতে যথাযথ মূসক পরিশোধ না করা। প্রথম দফা নিরীক্ষায় ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সুদ ছাড়া ৩৬৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। দাবিনামা জারি করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা পুনঃতদন্তের অনুরোধ জানান। এর প্রেক্ষিতে একজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ৩৬৫ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, নিটল মোটরস ভারতের টাটা মোটরসের কাছ থেকে বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ প্রভৃতি সিকেডি অবস্থায় আমদানি করে তা সিবিইউতে রূপান্তর করে। যশোরে ভারতের টাটা মোটরসের নীতা কোম্পানি এবং নিটল মোটরসের জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি বিক্রয় চালানের (মূসক-১১) মাধ্যমে সেই গাড়ি নিটল মোটরসের কাছে বিক্রয় করে।
দলিলাদি যাচাই করে দেখা গেছে, নীতা কোম্পানির সংযোজিত সব গাড়ি নিটল মোটরসের কাছে বিক্রয় করেছে। তবে নীতা কোম্পানির একই মেয়াদের বিক্রয় তথ্যের সঙ্গে নিটল মোটরসের ক্রয় হিসাবের মিল পাওয়া যায়নি। কারণ নীতা মোটরস কিছু পণ্য নিটল মোটরসের কাছে বিক্রি করেছে, বাকি পণ্যগুলো ব্যাংকের নামে বিক্রি দেখানো।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিটল মোটরস নীতা কোম্পানি থেকে চার হাজার ৫৫৩ ইউনিট গাড়ি আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৩৫৪ ইউনিট গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় রেজিস্টারে এন্ট্রি করে ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু চার হাজার ১৯৯ ইউনিট গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় রেজিস্টারে এন্ট্রি করা হয়নি, ভ্যাটও পরিশোধ করা হয়নি। এসব গাড়ির মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৫৫৪ কোটি টাকা, যার বিপরীতে ৮৩ কোটি টাকা প্রযোজ্য।
প্রতিষ্ঠানের দাবি, চার হাজার ১৯৯ ইউনিট গাড়ি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহণ সেবামূলক ব্যবসায় ব্যবহারের উদ্দেশ্যে স্থায়ী সম্পদে রূপান্তর করা হয়েছে। নীতা কোম্পানি থেকে ক্রয় করার পর তা বিআরটিএ থেকে নিটল মোটরসের নামে নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। বাইরের ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়নি। ফলে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে না। তবে তদন্ত কমিটি মত দিয়েছে, ভ্যাট ফাঁকি দিতেই নিটল মোটরস এসব গাড়ি ব্যাংকের নামে ক্রয় করেছে। পরে তা ভোক্তার কাছে কিস্তির মাধ্যমে বিক্রয় করেছে। ফলে এর ওপর ভ্যাট দিতে হবে। তবে প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব গাড়ির নিজস্ব পরিবহণ পরিচালনা ও মালিকানার তথ্য চাওয়া হলেও তা সরবরাহ করা হয়নি।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানের ‘ইনকাম ফ্রম অপারেটিং ভেহিক্যাল’ বা যানবাহন পরিচালনায় আয় হয়েছে এক হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। ১৫ শতাংশ হারে এ খাতে ২৭৮ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধের কথা ছিল। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কেনাকাটার ওপর ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং স্থান ও স্থাপনা ভাড়ায় ৫২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকির দায়ে দাবিনামা জারি করেছে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট।
এ বিষয়ে নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ যুগান্তরকে বলেন, নিটল মোটরস শতভাগ কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠান। অযৌক্তিকভাবে ভ্যাট বিভাগ দাবিনামা জারি করেছে। কারণ প্রতিবছর ওরাই (ভ্যাট বিভাগ) আমাদের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দিত। এখন তারাই ভ্যাট দাবি করছে কীভাবে সেটা বোধগম্য নয়। এই দাবিনামার বিপরীতে আপিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই আপিল করা হবে।