রোজার নিয়ত কতক্ষণ পর্যন্ত করা যাবে

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম

রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামী কালের রোজা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়।
হাদিস শরিফে আছে, সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। (সহিহ বুখারি ১/২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৬)
ফরজ রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম।
উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩৩৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯-২৬০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯)
রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে।
সালামা ইবনুল আকওয়া রা. বলেন, (আশুরার রোজা যখন ফরজ ছিল তখন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের একজন ব্যক্তিকে ঘোষণা করতে বললেন, ‘যে সকাল থেকে কিছু খায়নি সে বাকি দিন রোজা রাখবে। আর যে খেয়েছে সেও বাকি দিন রোজা রাখবে। কারণ আজ আশুরা-দিবস।’ (সহিহ বুখারি ২০০৭)
আবদুল করীম জাযারী (রহ.) বলেন, কিছু লোক সকালে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। তখন উমর ইবনে আবদুল আযীয (রহ.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি (ইতিমধ্যে কিছু) খেয়েছে সে বাকি দিন খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর যে খায়নি সে বাকি দিন রোজা রাখবে।’ (মুহাল্লা ৪/২৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬)
ফরজ রোজার নিয়ত করার সময়সীমা হল, দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত। অর্থাৎ দিনের মধ্যভাগের আগ পর্যন্ত নিয়ত করলে তা শুদ্ধ হবে।
আরবি দিনের সূচনা হয় সুবহে সাদিক থেকে। তাই সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যতটুকু সময় হয়, এর মাঝামাঝি সময়ের আগে রোজার নিয়ত করলেই রোজা রাখা শুদ্ধ হবে।
যেমন যদি সেহরির সময় তথা সুবহে সাদিক শুরু হয় ৫টায়। আর সূর্যাস্ত হয় সন্ধ্যা ৭টায়। তাহলে একদিন হবে ১৪ঘণ্টায়।
তাই সুবহে সাদিক থেকে ৭ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার আগে রোজার নিয়ত করতে হবে। কেউ সুবহে সাদিকের সময় রোজার নিয়ত করতে ভুলে গেলে এই সময়ের আগে নিয়ত করলে রোজা রাখা শুদ্ধ হয়ে যাবে।
অর্থাৎ, এই হিসাব মতে দুপুর ১২টার আগে রোজার নিয়ত করলে সেদিনের রোজা রাখা শুদ্ধ হবে। যদি এর পর নিয়ত করে তাহলে শুদ্ধ হবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৫)
পুরো রমজানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি।
রাতে রোজার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- রমজানের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে।-বাকারা ২ : ১৮৭
নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন-মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদিস শরীফে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। (আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৭)