এক দশক পর সমাবেশ করে যে হুঁশিয়ারি দিল জামায়াত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩, ০৯:৫০ পিএম
দীর্ঘ এক দশক পর রাজধানীতে সমাবেশ করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। শনিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই সমাবেশ করেছে দলটি। সেই সমাবেশ থেকে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত নিরপেক্ষ সরকার। তাই কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মানতে হবে। না মানলে রাজপথ উত্তপ্ত হবে।’
‘কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতা ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে’ এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত।
এর আগে শুক্রবার রাতে কিছু মৌখিক শর্তে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সে অনুযায়ী আজ (শনিবার) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াত। সেখানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাইরের খোলা জায়গা এবং ফুটপাতে অসংখ্য নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি মূল সড়কেও চলে যায়। এতে মৎস্য ভবন ক্রসিং থেকে শাহবাগ অভিমুখী সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশ ঘিরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সমাবেশে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। এতে তিনি দশ দফা তুলে ধরে বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবিলম্বে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, অবিলম্বে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা-মহানগরীর সব কার্যালয় খুলে দিতে হবে। সংবিধান স্বীকৃত মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, নিখোঁজ ব্যক্তিদেরকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।’
কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন করে জনগণের দাবি মেনে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান নির্বাচন। সেটা হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। সেটা করতে হলে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করতে হবে। কিন্তু এরা (আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে) দিনের ভোট রাতে করে। লজ্জা তো ঈমানের অঙ্গ। কিছুটা তো লজ্জা থাকা উচিত নেতাদের। সুতরাং বলব, ২০১৪ ও ২০১৮ গেছে যাক। এবার আর সেভাবে যাবে না। এটা যদি আওয়ামী লীগ বুঝে তাহলে বলব- আসুন, আলোচনা করুন। এবারের নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে দাবি আদায়ে যা করা দরকার আমরা তা করব।’
সমাবেশের অনুমতি দেওয়া ও শেষ পর্যন্ত সহায়তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াত কখনো বিশৃঙ্খলা করেনি, করে না এবং করবেও না। যদি বিশৃঙ্খলা হয় তবে সেটা বাইরে থেকে কেউ করতে পারে, স্যাবোটেজ। জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস, নাশকতা, বিশৃঙ্খলা এবং হামলায় বিশ্বাস করে না।’
তিনি দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে জামায়াত মুক্ত করবে এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি এবং একটি নৈতিকতাসম্পন্ন ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার’ আহ্বান জানান সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন, মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুর রহমান মুসা, সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমির আ. জব্বার, ঢাকা মহানগরীর উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আবদুল মান্নান, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।