‘ভিন্নমত’ পোষণ করলেই জাতির শত্রু হয় না: রব
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২২, ০৭:৩৭ এএম
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ভিন্নমত ও পথের মানুষকে ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে নাগরিকের ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ ও ‘দেশাত্মবোধকে’ পদদলিত করা কোনোক্রমেই ন্যায়সঙ্গত নয়।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।
আ স ম রব বলেন, ‘আমাদের সংবিধান চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে, কিন্তু দেশে বিরাজমান ঔপনিবেশিক ধাচের শাসন ব্যবস্থা জনগণের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ ও স্তব্ধ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মুখোশ পরিধান পূর্বক ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়। ভিন্নমতকে দেশের শত্রু আখ্যা দেওয়া, খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা এবং গ্রেফতারের দাবি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যই প্রকাশ করে।’
জেএসডি সভাপতি বলেন, ‘যে কোনো একটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে নাগরিকদের জাতির শত্রু দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করার নৈরাজ্যপূর্ণ প্রবণতা ও বক্তব্য মানুষের মৌলিক অধিকারকে দারুণভাবে ক্ষুন্ন করবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও দমনমূলক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ভীতি প্রদানে সরকারকে প্রবলভাবে প্রলুদ্ধ করবে।’
‘এ ধরনের সংবিধান বিরোধী ও বিপজ্জনক বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে অনেক বেশি সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।’
নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রসঙ্গে আব্দুর রব বলেন, ‘ভিন্নমত ও পথকে ভয়ের আবহে সংকুচিত করতে করতে সমাজে মানুষের গলায় জুতার মালা পরানোর ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করছে। যা সমাজ এবং রাষ্ট্রকে ক্রমাগতভাবে সভ্যতা বহির্ভূত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘স্কটল্যান্ডের জনগণ যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার দাবি শুধু উত্থাপনই করছে না, তাদের এ দাবিতে গণভোটও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেউ কাউকে দেশের বা জাতির শত্রু আখ্যায়িত করেনি।রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সত্যকে কফিনে পেরেক মেরে বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখাকেই নৈতিক কর্তব্য মনে করেছে, যা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের পক্ষে বড় বিপদ হয়ে উঠছে।’
আব্দুর রব বলেন, ‘কোনো এক অজুহাত সৃষ্টি করে ভিন্নমত ও পথকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে হীনরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নক আউট করা বা নির্মূল করা বা নিধন করা ন্যায়সঙ্গত তো নয়ই বরং ভয়াবহ অমঙ্গলজনক।’
‘পৃথিবীতে এমন কোনো বিষয় নেই যে বিষয়ে একের অধিক মত ও পথ নেই বা মত ও পথের ভিন্নতা নেই। মত ও পথের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের ভিত্তি ও সৌন্দর্য। ব্যক্তির স্বাধীনতা নিশ্চিত হলেই রাষ্ট্রের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত হয়। ভিন্নমতের স্বাধীনতা হরণ করলেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।’
জেএসডি সভাপতি আরও বলেন, ‘জোর করে প্রতিপক্ষ বানিয়ে মীমাংসিত বিষয়কে অমীমাংসিত করে রাজনীতিতে বিভেদ উসকে দিয়ে ফায়দা লুটার প্রবণতা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।’