
প্রিন্ট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১২ এএম
বাবাকে বাঁচাতে সেদিন দুজন শহিদ হয়েছিলেন: আমান আযমী
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম
আরও পড়ুন
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী জানিয়েছেন, তার পিতার ওপর এক সমাবেশে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার সময় তাকে রক্ষা করতে গিয়ে দুজন শহিদ হয়েছিলেন।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ১৯৭০ সালের ১৮ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে জামায়াতের সমাবেশে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার বাবার ওপর হামলা করে। সেদিন আমি আব্বার পেছনে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আব্বা আমাকে না করে দেন। পরে জানতে পারি, সমাবেশে আব্বাকে আক্রমণ করা হয়েছিল এবং তাকে রক্ষা করতে গিয়ে দুজন শহিদ হন।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্টেডিয়ামের ওপর থেকে রড, লাঠি ও ঢিল নিক্ষেপ করেছিল। তখন আব্বাকে ঘিরে নিয়ে নেতাকর্মীরা নিরাপদে গাড়িতে তুলে বাসায় ফেরত আনেন। এ ঘটনার পরে আব্বা আহত নেতাকর্মীদের নিজ হাতে সেবা করেছেন। আমাদের বাড়ির পাশে একটি টিনের ঘরে অনেক আহত নেতাকর্মী কয়েকদিন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ওই সাক্ষাৎকারে আমান আযমী বলেছেন, ৬৯ সালে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণের পর গভর্নর এমএন হুদা বাবাকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তিনি সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনার স্বাধীনতা হারাতে চাননি।
‘১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশজুড়ে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল, তখন ইয়াহিয়া খান মার্শাল ল’ জারি করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সেই সময় গভর্নর মোনায়েম খানকে অপসারণ করে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এমএন হুদাকে।
এ প্রসঙ্গে গোলাম আযমপুত্র বলেন, আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি, গভর্নর এমএন হুদা শপথ নেওয়ার একদিন পর আমাদের বাসায় এসেছিলেন। আমাদের বাসা তখন টিনের ছিল, পাশেই চাচার একটি পাকাবাড়ি ছিল। গভর্নর সাহেব চাচার বসার ঘরেই বসেন। চারদিক সাজানো, বেশ আনুষ্ঠানিক পরিবেশ। অনেক মোটরসাইকেলসহ উনি এসেছিলেন, আব্বা তাকে চাচার ড্রইংরুমে রিসিভ করেন।
তিনি আরও বলেন, তখন তো বুঝিনি কী আলোচনা হচ্ছে। পরে জেনেছি, গভর্নর সাহেব আব্বাকে বলেছিলেন—‘আপনি আমার উপদেষ্টা হোন, মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করুন। উপদেষ্টার কোনো আনুষ্ঠানিক পদ না থাকায় আপনি যেকোনো একটি মন্ত্রণালয় গ্রহণ করুন, কিন্তু আমার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করুন’। কিন্তু আব্বা বিনয়ের সঙ্গে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তো রাজনীতি করি দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। সরকার যদি দ্বীনবিরোধী কোনো কাজ করে, আমি তো তার সমালোচনা না করে পারবো না। মন্ত্রী হলে সেটা আর করা যাবে না।’ এমন কথার পর সেদিন গভর্নর এমএন হুদা কিছুটা মুখভার করে চলে গেলেন।
সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ৭০-এর ১২ নভেম্বর এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির ছিল। তবে সেটিই ছিল পাকিস্তানের শেষ এবং একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচন, যেটাতে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ওই নির্বাচনে বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে গিয়েছিলাম আব্বার সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, আমি আব্বার সঙ্গে যেখানেই যেতে চাইতাম তিনি কখনও না করতেন না।