
প্রিন্ট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম
বিএনপি-হেফাজতের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত এলো

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা। শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত ৮টা থেকে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় এ বৈঠক হয়। এতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিচার ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়েও একমত পোষণ করেন বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ছিলেন। অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে ছিলেন-ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী প্রমুখ।
বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমরা যেমন সংস্কার চাই, বিচার চাই; কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে চাই। ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু প্রায় কিছুদিন পরপর দেখা যাচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুনে, জুন থেকে ডিসেম্বরে-এরকম কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন বিলম্বিত করার পাঁয়তারাও আমরা লক্ষ্য করছি। আমাদের জোরালো দাবি প্রধান উপদেষ্টা খুব দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেবেন, যাতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করা যায়। সেই দাবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম একমত হয়েছে। এ দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং তাদের অন্তর্গত রাজনৈতিক দল যথাযথ কর্মসূচি প্রণয়ন করবেন কিনা তা উনারা চিন্তা করে দেখবেন।
তিনি বলেন, সারা জাতি জানে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর কি নির্যাতন চালানো হয়েছিল গত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টদের আমলে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, তাতে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের সঠিক সংখ্যাও এখনো পর্যন্ত নিরূপণ করা হয়নি। সেই শাপলা চত্ব¡র হত্যার বিচার চেয়ে হেফাজতের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। উনারা সেই মামলার সুষ্ঠু বিচার চান, দ্রুত নিষ্পত্তি চান। আমরা তাদের সঙ্গে একমত। এছাড়া ২০২১ সালে একইভাবে দেশের আলেমদের ওপর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল, ২৪ জন শহিদ হয়েছিলেন চট্টগ্রামে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেই হত্যাকাণ্ডের মামলাও করা হয়েছে। সেই মামলার সুষ্ঠু বিচার চায়, দ্রুত নিষ্পত্তি চায়। আমরা তাদের সঙ্গে একমত।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। জেলে নেওয়া হয়েছে এবং সীমাহীন নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের সব মামলা প্রত্যাহার চান। আমরাও একমত। সরকারের কাছে আহ্বান জানাব তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিচারের আওতায় আনার জন্য হেফাজতে ইসলামের নেতাদের দাবি আছে। যে দাবি আমরা প্রাকাশ্যে করেছি, লিখিতভাবে করেছি; সরকারকে জানিয়েছি, জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। তারা সেই দাবি আমাদের কাছে পুনরায় জানিয়েছেন। আমরা চাই আওয়ামী লীগকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনা হোক। সেজন্য প্রয়োজনে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন সংশোধন করা যায়, বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হয় তা এদেশের জনগণ মেনে নেবে। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রী-এমপি ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে সেই মামলাগুলোর এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি আমাদের সামনে নেই। সমগ্র জাতি প্রত্যাশা করে এই মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। সেজন্য আমরা প্রস্তাব করছি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি করা হোক। প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত টিম এবং অন্যান্য সাপোর্ট বৃদ্ধি করা হোক। প্রয়োজনে বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। এই প্রস্তাব আমরা রাখছি। এ সময় হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, তারা সংবিধানে আল্লাহ ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে-এ দাবিও জানিয়েছেন।