
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১০ এএম

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১১:৫০ পিএম

আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগের বিচার এবং দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহতরা। এ সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ না হলে সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে এক সমাবেশে ‘ওয়ারিঅরস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে শাহবাগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তিকে নির্বাচনে আনার ইতিহাস নেই। এছাড়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচার দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
আহতদের সমাবেশে হাত হারানো আতিকুল গাজী বলেন, আওয়ামী লীগকে কোনোভাবে পুনর্বাসন করা যাবে না। যদি করতে হয় আমার হাত ফিরিয়ে দিতে হবে। দুই হাজার শহিদ এবং ত্রিশ হাজার আহতকে সুস্থ করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন কোনোভাবেই করতে দেব না। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, যেভাবেই হোক হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসিতে ঝোলান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন।
আহত মাকসুদুর রহমান বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ’২৪-এর অভ্যুত্থানের পরও যোদ্ধাদের আবার মাঠে নামতে হচ্ছে। অথচ সেই হাসিনার বিচার এখনো হলো না। অবিলম্বে আপনারা সাবধান হন, নইলে জুলাই যোদ্ধারা আবার আপনাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসবে।
অপর আহত আরমান হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হয় তাহলে আমরা ৬৪ জেলা থেকে জুলাই যোদ্ধা শহিদ পরিবার ঢাকামুখী হব। আবার একটি গণ-অভ্যুত্থান হবে। এ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ হবেই আওয়ামী লীগকে যারা সমর্থন করছে, তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা তাদের সমর্থন করেছে তাদের অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।
ওয়ারিঅরস অব জুলাইয়ের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, একটি অভ্যুত্থান হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে খুনি হাসিনার দোসররা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দুই হাজার লাশ এবং হাজারো আহতের অঙ্গহানির ওপর রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে। অবিলম্বে খুনি হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এনসিপির বিক্ষোভ-সমাবেশ : আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও দলটি নিষিদ্ধের দাবিতে শনিবার বিকালে শাহবাগে সমাবেশ করেছে এনসিপি। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ মোড় থেকে শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের শপথ করে বলছি-আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। মনে রাখতে হবে, কোনো শান্তিপূর্ণ ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিদায় হয়নি। হাজারো মানুষের রাজপথ ভেজানো রক্তের মধ্য দিয়ে এই খুনি-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে। আমাদের পুনর্জন্ম হতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগকে আমরা পুনর্বাসিত হতে দেব না। বাংলাদেশে যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, ততবার সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
আখতার বলেন, আমাদের ভাইবোনরা জীবন দিয়েছিল ওই খুনি হাসিনার হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে-বাংলাদেশকে ফাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্ত করতে। তিনি বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো সাত মাস পেরিয়ে গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কোনো বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেনি।
সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি। এখন পর্যন্ত যে বা যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে তাদের এর মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ১০টা ফেরাউন আর ১০টা নমরূদ একসঙ্গে করা হয় তাও হাসিনার সমান হবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যারা গণ-অভ্যুত্থানে পরাজিত হয়েছে তাদের পুনরায় নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
হাসনাত বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনাদের যাদের ক্যান্টনমেন্টে কাজ, তারা ক্যান্টনমেন্টেই থাকুন। আমরা আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান জানাই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে আপনাদের যে অবদান রয়েছে, সেটাকে আমরা স্বীকার করি। আমরা বলতে চাই, গত ১৬ বছর আপনারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছেন। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে শুধু রাজনীতিবিদরা।
তিনি বলেন, আমরা কোনো ইনস্টিটিউটের বিপক্ষে নই। আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে সেগুলোকে আমরা ঠিক করতে চাই। সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আপনাদের ওপর এখনো আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা আমাদের আস্থার প্রতিদান দেবেন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে না। কিন্তু আপনারা যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেন তাহলে আমাদের মতো মজলুমদের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম সদস সচিব নিজাম উদ্দিন, নাহিদ উদ্দিন তারেক, মাহিন সরকার, রফিকুল ইসলাম, আসাদ বিন রনি, আকরাম সাঈম, জুলাই ২৪ শহিদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারমান গোলাম রহমান প্রমুখ।
ঢাবিতে ছাত্র অধিকারের বিক্ষোভ : শনিবার বেলা ৩টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এতে পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে খুন করতে পারে সেই দল আবার ক্ষমতায় আসার জন্য দুই লাখের বেশি আমাদের বিপ্লবী ভাই-বোনকে খুন করতে, ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করতে ন্যূনতম কুণ্ঠাবোধ করবে না।
বিন ইয়ামিন বলেন, বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ কয়েক হাজার নেতাকর্মী হত্যা, গুম-খুন করেছে। তারপরও কীভাবে আপনারা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ধারণ করে না। সুতরাং এই বাংলার মাটিতে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।