১৬ বছর আন্দোলন করে তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে: আমানউল্লাহ আমান

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৫ এএম
-67d9caf354fbd.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, দীর্ঘ ১৬টি বছর তারেক রহমান আন্দোলন করে এই বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করল। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১২টায় পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ‘হিফজুল কোরআন ও কোরআন তেলাওয়াত’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আমানউল্লাহ আমান বলেন, আন্দোলন যখন শুরু হলো- ছাত্রদলের বীর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে গুম করা হলো। শত শত নেতাকর্মীকে গুম করেছে। আজকে যিনি প্রধান অতিথি (মামুনুল হক) উনা কেউ গুম করতে চেয়েছিল। ভাবছিল প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হবে, দিনের ভোট রাতে হবে। উনিই দেশ ছাড়া হলেন। ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনা। শত শত জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মীদের, সর্বশেষ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা পেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ। যে কথাটি বলেছিলেন আরও চার বছর পাঁচ বছর আগে তারেক রহমান। তিনি (তারেক রহমান) বলেছিলেন দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে। হয়েছে কিনা বলেন। তারেক রহমানের সুদূরপ্রসারী সেই চিন্তার কথাই আজ প্রমাণিত হলো।
আমান বলেন, তারেক রহমানের গায়ে কিন্তু রক্তের কালো দাগ ছিল এরশাদের পেটোয়া বাহিনী দ্বারা। বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে এরশাদ তাকে মৃত্যুর পথে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পিছান নাই খালেদা জিয়া। তিনি বলেছিলেন আমার ছাত্র হত্যা করেছে, আমার ড. মিলনকে মেরেছে কিন্তু বাংলাদেশের সকল ছাত্ররা আমার সন্তান।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংকটকালে কারা নেতৃত্ব দিয়েছে আজকের এ প্রজন্মকে জানতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হলো ২৫ মার্চ ১৯৭১ এ, বাংলাদেশের মানুষ দিগ্বিদিক পাচ্ছে না কোথায় যাবে, কী করবে, কী সিদ্ধান্ত নিবে, সেই সময়ে একাত্তর সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হলো। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। লক্ষ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে আমরা পেলাম স্বাধীনতা।
অনুষ্ঠানে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খিলাফত মজলিস আমীর আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ‘অনেকে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগকে এক পাল্লায় বিচার করে, আমি মনে করি এটা অনেক বড় অবিচার। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কোনো ইসলামিক রাজনৈতিক সংগঠন নয়, তবে এই দুটির মধ্যে ঐতিহাসিক অনেক ব্যবধান রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এদেশের রাজনীতি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা সবসময়ই আমরা এদেশে দুটি ধারা লক্ষ্য করতে পাই। সেই অবিভক্ত ব্রিটিশ আমল থেকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এসেছিল, যখন ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গের উত্থানের ঘোষণা এসেছিল, যখন মুসলিম জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এসেছিল, তখন এই বঙ্গ অঞ্চল থেকে কিছু মানুষ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল, তারা ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলার উত্থানকে ঠেকিয়ে দিতে চেয়েছিল যারা মুসলিম জাতিসত্তার বিরোধী ছিল। সেই ঐতিহাসিক ধারা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে এসেছে। এভাবে দুটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংঘাত চলেছে লড়াই চলেছে। একটি ধারা ছিল পূর্ববঙ্গ কেন্দ্রিক, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ তথা মুসলিম জাতীয়তাবাদের তথা মুসলিম জাতিসত্তা গঠনের যে ঐতিহাসিক ধারা এই ধারায় যারা রাজনীতি করে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সেই ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। বিএনপিকে যেমন এই কথাটা মনে রাখতে হবে যার বিনিময়ের সমালোচনা করে তাদেরকেও এই কথাটা মনে রাখতে হবে।
আবু তালেব ও আবু জাহেলের উদাহরণ টেনে মামুনুল হক বলেন, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কেউই ইসলামী রাজনীতি করে না বরং তাদের রাজনীতির ভিন্ন দর্শন রয়েছে। ঠিক যেমন আবু জাহেল এবং আবু আবু তালেব- কেউই ইসলামের অনুসারী ছিলেন না। কিন্তু কেউ যদি আবু জাহেল এবং আবু তালেবকে এক পাল্লায় মাপে তার চেয়ে বড় জাহেল আর কেউ হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ইসলামী রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিএনপি আবু তালেবের ভূমিকায়, আর আওয়ামীলীগ আগাগোড়ায় আবু জাহেলের ভূমিকায়।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আজ থেকে যারা ২০ বছর আগে জন্ম নিয়েছে তারা ভালো কোন রাজনীতি কখনোই দেখেনি। বিগত বছরগুলোতে ক্যাম্পাস ভিত্তিক যে রাজনীতি তৈরি হয়েছিল তা কোনভাবেই ভালো রাজনীতি হতে পারে না। এই রাজনীতি পুরো কাঠামোকেই ধ্বংস করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মেধার ভিত্তিতে ছাত্রদল ছাত্র রাজনীতি করে যাচ্ছে বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ তাদেরকে দেশনায়ক তারেক রহমান যেভাবে পজিটিভ ওয়েতে নির্দেশনা দিচ্ছেন তার ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ বছর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে রয়েছে; এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যেও রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রমুখ।