Logo
Logo
×

রাজনীতি

বাবা মন্ত্রী হওয়ার পর আমার পকেট মানির ক্রাইসিস শুরু হয়: মুজাহিদপুত্র মাবরুর

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:২০ পিএম

বাবা মন্ত্রী থাকার সময় পকেট মানির ক্রাইসিস শুরু হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর। 

২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৬ সাল পর্যন্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। 

বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর শুধু বাবা না; আমাদের পুরো পরিবারকে যদি দেখেন, আম্মা আমি বা আমার ভাইদের মাঝে কোনো পরিবর্তন এসেছে এটা কেউ বলতে পারবে না। যেভাবে আমরা বাবার মন্ত্রীত্ব পাবার আগে জীবন যাপন করতাম ঠিক পরেও সেভাবেই জীবন যাপন করেছি। এখনও আমরা একইভাবে জীবন যাপন করছি। 

তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে যদি বলি, যখন আমরা মিন্টু রোডের বাসায় থাকতাম তখন কিন্তু আমি ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেই গিয়েছি। এখনো সেভাবে চলাফেরা করি। বাবা মন্ত্রী থাকাকালে আমি একটি দৈনিক পত্রিকায় চাকরি শুরু করি। সকালে শিফট থাকলে সেই ভোরেই আমি অফিসে চলে যেতাম। সাব-এডিটর হিসেবে আমি চাকরি করতাম। অফিসে আমি রিকশায় চড়ে যেতাম। সেখান থেকে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস শেষ করে আবার বাসায় ফিরতাম। আমাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি এই দীর্ঘ সময়ে। 

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সরকারি বাসা ছাড়ার কথা জানিয়ে মাবরুর বলেন, অনেক সময় পত্র পত্রিকায় আসে যে, মন্ত্রীত্ব চলে যাবার পরে অনেক মন্ত্রীই সরকারি বাসা ছাড়তে গড়িমসি করেন বা ছাড়তে চান না। আমাদেরকে বাবা শুরুতেই বলে দিয়েছিলেন যে আমার মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে কিন্তু আমরা তার আগেই সরকারি বাসা ছেড়ে দেব। তখন আমরা সেই বাসা ছেড়ে একটি ভাড়া বাসায় উঠেছিলাম। আমরা যেমন ভাড়া বাসা থেকে সরকারি বাসায় উঠেছিলাম সেভাবেই আবার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভাড়া বাসায় ফিরে যাই।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সরকারি ও দলীয় কাজ মেলাতেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আব্বা তার কাজগুলোকে ভাগ করতেন। পারিবারিক, সরকারি, সাংগঠনিক বা ব্যক্তিগত কাজ ভাগ করে নিতেন এবং কোনো সেক্টরের কাজ করতে গিয়ে তিনি অন্য সেক্টরের সুবিধা নিতেন না। আমাদেরকেও তিনি এভাবেই কাজ করতে বলতেন। যেমন দুপুরের আগে তিনি তার সরকারি কাজগুলো সেরে নিতেন। এরপর দুপুরের পর সাংগঠনিক কাজে তিনি সরকারি কোনো সুবিধা গ্রহণ করতেন না। সাংগঠনিক কাজ সংগঠনের মাধ্যমেই করতেন। এটি তার বইয়েও উল্লেখ রয়েছে। যেটি কিছুদিন আগেই আমরা উন্মোচন করলাম। জামায়াতের আমিরও এই ব্যাপারটি বলেছেন। 

পরিবারের সদস্যদের কখনো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে দিতেন না জামায়াতের সাবেক এ সেক্রেটারি জেনারেল। 

মাবরুর বলেন, বাবা আমাদেরকে বলতেন যে, তোমাদের বাসার কোনো কাজে সরকারি ফ্যাসিলিটি ব্যবহার করবে না। আমিও ব্যক্তিগতভাবে এভাবেই চলতাম। নিজের কোনো কাজে কখনো সরকারি গাড়িতে চড়িনি আমি। এটা তো আমাদের জন্য বরাদ্দই ছিল কিন্তু আমরা কখনো এই সুবিধা ভোগ করিনি। আম্মা যদি কখনো নানুবাড়ি যেতেন তখন হয়ত গাড়ি ব্যবহার করতেন, অন্যথায় তা বাসাতেই পড়ে থাকত। আমার বাবা আমাদের নিরুৎসাহিত করতেন যে, কোথাও যেতে হলে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করবে না। 

মাবরুর বলেন, তিনি (মুজাহিদ) আমাদের আলাদা পকেটমানি দিতেন। তা খুবই সামান্য ছিল। পকেট মানিতে ক্রাইসিস পড়াতেই কিন্তু আমি ২০০৫ সাল থেকে পত্রিকায় চাকরি করা শুরু করি। কারণ আমার তো কিছু একটা করা দরকার কারণ আমি যে এই ভার্সিটিতে যাই বা নিজের জন্য এক্সট্রা কিছু করতে চাইলে তো এই সামান্য পকেট মানি দিয়ে কিভাবে এফোর্ট করব। তখন বাবা আমাকে বললেন যে তাহলে তুমি কাজ করো। তার অনুমতি পাবার পরই আসলে আমি চাকরিতে জয়েন করি। 

মন্ত্রী হওয়ার পর পরিবারকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন মুজাহিদ। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তার ছেলে বলেন, যখন বাবা শপথ নিয়ে বঙ্গভবন থেকে বাসায় ঢুকলেন সেদিনই আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। এক নাম্বারে বলেছিলেন তোমরা সচিবালয়ের আশেপাশে যাতায়াত কম করবে এবং সেখানে প্রয়োজন ছাড়া যাবে না। দুই নাম্বারে বলেছিলেন তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে আমার দুর্নাম হয়। এমন যদি কিছু ঘটে তাহলে কিন্তু আমি মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াব।

আমাদের কারও জন্য যেন তার দুর্নাম না হয় বা দলের ইমেজ নষ্ট না হয় এমন কিছু করতে তিনি আমাদের মন্ত্রিত্বের প্রথম দিনই নিষেধ করেন এবং আমাদের চলাফেরায় যেন দাম্ভিকতা না আসে কখনো সে ব্যাপারেও তিনি দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। বাবা মন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম ৬ মাস কিন্তু আমরা আমাদের মগবাজারের ভাড়া বাসাতেই থাকতাম। ইভেন পুলিশ হাউজ প্রটোকল পর্যন্ত আমাদের সেই ভাড়া বাসায় নিয়ে আসা হয়েছিল যার কারণে পুলিশ কর্মকর্তারাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল, কারণ তাদের তো সেখানে থাকার মত কোনো ব্যবস্থা নেই। সেভাবেই আমরা প্রথম কয়েক মাস পার করলাম।

প্রসঙ্গত, জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।

অনুলিখন: কাজী ইনজামামুল হক 


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম