Logo
Logo
×

রাজনীতি

জাতীয় স্বার্থের জায়গায় সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান ডা. শফিকুরের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০১ পিএম

জাতীয় স্বার্থের জায়গায় সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান ডা. শফিকুরের

রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ ইফতারের আয়োজন করে দলটি। 

এতে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এদিন ইফতার পূর্ববর্তী সময়ে মিলনমেলায় পরিণত হয় চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র। 

এ সময় জাতীয় স্বার্থের জায়গাটায় সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ২৪ এর গণবিপ্লবের পর যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা আমাদের হাতে ধরা দিয়েছে, আমরা সকলের কাছে আহ্বান জানাই জাতীয় স্বার্থের জায়গাটায় যেন আমরা এক হই। আমাদের মতের ভিন্নতা থাকবে। মতপার্থক্য থাকা কোনো অপরাধ নয়। বরঞ্চ এটি গণতান্ত্রিক রাষ্টের সৌন্দর্য। আমাদের মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপান্তরিত না হয়। দেশকে গড়া আমাদের স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা। আমরা জাতির সামনে তুলে ধরবো। জাতি যারটা গ্রহণ করবে, আগামীতে জাতির সেবক হিসেবে বাংলাদেশকে তাদের হাতে তুলে দেবে। এই জায়গাটা আমরা সকলে সম্মান প্রর্দশন করি। 

জামায়াতের আমির বলেন, সাড়ে ১৩টি বছর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে শত শত খুলে কাজ করতে পারিনি। সবগুলো কার্যালয় আমাদের বন্ধ রাখা হয়েছে। জামায়াতের তৎকালীন আমিরসহ এক এক করে আমাদের নেতাদের মিথ্যা অভিযোগে অত্যন্ত নির্মমভাবে,পাশবিক নির্যাতন করে বিচারিক কায়দায় ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। একজন (এটিএম আজহারুল ইসলাম) মুত্যৃযন্ত্রণা বুকে নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন। ৫ আগস্ট বাংলাদেশে মজলুমরা মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু আমার ভাই এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো মুক্তি পাননি। আমরা এই পাথর বুকে বহন করে চলছি। আইনের প্যাঁচ দিয়ে কেনো বিলম্ব করছে আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা চাই যাদের ওপর জুলুম হয়েছে, তাদের একজন মানুষও যেন জেলের ভেতরে আর না ঢুকে। অবিলম্বে আমাদের ভাইকে যেন সসম্মানে আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের শত শত কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য যুবককে থানায় ধরে নিয়ে, পায়ে বন্ধুক ঠেকিয়ে গুলি করে পা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। হাত কেটে ফেলা হয়েছে, ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, গুম করা হয়েছে, চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, ব্যবসা বাণিজ্য তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই কষ্টগুলো বুকে বহন করছি। শুধু আমরা নয়, গোটা জাতি এ অবস্থার শিকার হয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল, রাজনৈতিক দল, ওলামা-কেরাম, প্রতিবাদী কন্ঠ, সাংবাদিকসহ কাউকেই তারা (আওয়ামী লীগ) ছাড় দেয়নি। সবার ওপর তারা জুলুম করেছে। লাখ লাখ মামলা দিয়ে কোটি মানুষকে বারবার জেলের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। আওয়ামী জাহেলিয়ার যুগ আর বাংলাদেশে ফিরে না আসুক। 

তিনি আরও বলেন, যারা আমাদেরকে দেশের নাগরিক মনে করত না, তারাই দেশত্যাগ করেছে৷যাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা আছে, তারা কখনও দেশ ছেড়ে পালায় না৷আমরা যাবো না কোথাও, এই দেশে আমাদের প্রিয় দেশ। জন্মভূমি। এই দেশ ছেড়ে আমাদের পালানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এই দেশ ছেড়ে তারাই পালাবে যাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা নেই। দেশে এখন যারা আছে তারা বুকে গুলি নিবে তবুও দেশ ছেড়ে পালাবে না। 

জামায়াতের আমির বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। তার কতিপয় জিনিস অবশ্যই পরিষ্কার হওয়া উচিত। এজন্য সকলে আমরা একমত, এখানো কারও কোনো দ্বিমত নেই। আমরা সবাই বলছি সংস্কারের প্রয়োজন। কতটুকু প্রয়োজন সেটা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সংস্কার যে প্রয়োজন এ ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই। আমরা বর্তমান সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। যৌক্তিক সময় মানে অযৌক্তিক সময় কাটানো নয়। আবার যৌক্তিক সময় মানে চাপ দিয়ে তাড়াহুড়োও নয়। যৌক্তিক সময় হচ্ছে এ কাজের জন্য, মৌলিক সংস্কারগুলোর জন্য যে সময়টুকু প্রয়োজন আমরা সরকারকে সেটুকু সময় দেওয়ার পক্ষে। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে শফিকুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সরকার প্রধান জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা তিনি জাতিকে বলেছেন। আশা করি, তিনি অবিলম্বে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করবেন। জাতি এ ব্যাপারে আরও আশাবাদী হবে। আস্থাশীল হবে। এবং নিজেদের ব্যাপারে পরিকল্পনা সাজানোর সুযোগ প্রতিটা দল পাবে। আমরা এটা আশা করি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে একক কোনো দলের নয়। এই দেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব ১৮ কোটি মানুষের। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমেই জনগণ সংগঠিত হয়ে তাদের আস্থা ও ভাবনা জাতীয় জীবনে তারা তুলে ধরে। রাজনৈতিক দলগুলো কাধে এখন গুরুদায়িত্ব। এই ৫৩ বছর জঞ্জাল নিয়ে যেভাবে আমরা চলেছি, আগামীতে যেন আমরা জঞ্জালমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারি, সেভাবেই সকল রাজনৈতিক দল কর্মপরিকল্পনা সাজাবেন আমরা আশা করি। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ৮ বছরের একটি শিশুর নিরাপত্তা দিতে না পারা জাতির জন্য লজ্জার। নৈতিক শিক্ষার অভাবের কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা এমন এক দেশ চাই যেখানে কেউ নির্যাতনের শিকার হবে না। সবাই যেন নিরাপদে বসবাস করতে পারে। এ সময় কুরআনের আলোকে মানবিক বাংলাদেশ গঠনের কথাও বলেন তিনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুনির হোসাইন কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ, কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা মুনতাসিম বিল্লাহ মাদানী, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এনপিপির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ফরহাদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার রাশেদ প্রধান, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গণি, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ। শহিদ আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আলী হোসেন এবং জামায়াত-শিবিরের শহিদ ও মাজলুম নেতাদের পরিবারের সদস্যগণ এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের বেশ কয়েকটি শহিদ পরিবারের সদস্যগণ ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছেন।

এ ছাড়া, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক জনাব আবুল আসাদ ও বর্তমান সম্পাদক শাহীদুল হক আজম, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউনেশনের  সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন ও নির্বাহী সম্পাদক মাসুদুর রহমান খলিলী, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম প্রমখ ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। ইফতার মাহফিলে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এ্যাডভোকেট মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল ও এডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম