Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফ্যাসিস্টদের বিদেশে ৫৮২ ফ্ল্যাট চিহ্নিত

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফ্যাসিস্টদের বিদেশে ৫৮২ ফ্ল্যাট চিহ্নিত

ফাইল ছবি

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী সুবিধাভোগীরা দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। শুধু বিদেশেই তাদের মালিকানায় থাকা ৫৮২টি ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে ২৩টি কোম্পানির অধীনে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪৭৪ ডলার এবং ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৪৮০ ইউরো। আর দেশে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের দেশে-বিদেশে প্রায় ১০ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এসব কেনা হয়েছে। ফলে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এসব সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করেছেন। ৭৪টি আদেশে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১০ হাজার ৩১০ কোটি ২৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৭১ টাকা এবং বিদেশে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও জব্দ করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দলটির বিভিন্ন নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। এরপর পর্যায়ক্রমে এসব সম্পদ চিহ্নিত ও আদালতের মাধ্যমে জব্দ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আদালতের ৫৫টি আদেশের মাধ্যমে ক্রোককৃত স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ১৯১ একর জমি। যার বাজারমূল্য ৬৯০ কোটি ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ১১২ টাকা। এছাড়া ২৮টি বাড়ি ও ৩৮টি ফ্ল্যাট ক্রোক করা হয়েছে। এগুলোর বাজারমূল্য ৬১ কোটি ৩৮ লাখ ৮১ হাজার ৪০৯ টাকা। এছাড়া ১৫টি প্লট, ৬টি দোকান, ২৩টি গাড়ি, একটি ট্রাক, ৩টি জাহাজ, তিনটি কোম্পানি ও ৫২টি বাণিজ্যিক সংগঠন ক্রোক করা হয়েছে।

আর আদালদের ৫৪টি আদেশে অবরুদ্ধ করা অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ১০৩০টি ব্যাংক হিসাব। এসব হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ৮১৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ২৭৯ টাকা। এছাড়া ১৪৮ লাখ ১২ হাজার ৯৬ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৮ হাজার ৭১৩ কোটি ৭৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার কোম্পানি শেয়ার ও নগদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা অবরুদ্ধ করা হয়। অবরুদ্ধ তালিকায় আরও আছে ৬৬০ দশমিক ৩ গ্রাম স্বর্ণ, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৯টি বিও হিসাবে স্থিতি ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৩৮ টাকা, তিনটি বিমা পলিসিতে স্থিতি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকা, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার এবং ৫৫ হাজার ইউরো।

দেশে মোট ৭৬৫ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮৯৮ টাকার স্থাবর এবং ৯ হাজার ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আর বিদেশে ১২০ কোটি ৪৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৮ টাকার স্থাবর এবং ৪৫ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৪২৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব সম্পদের মালিকানা পতিত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ও ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই দুদক এদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে কাজ শুরু করে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে কেনা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য নিশ্চিত হতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), এনবিআর ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেয় দুদক। এখন পর্যন্ত যাদের সম্পদের অকাট্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতের আদেশের মাধ্যমে তাদের সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এখন বিদেশে থাকা সম্পদ ফেরাতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।

জানা যায়, এখন পর্যন্ত দেশে-বিদেশে যাদের সবচেয়ে বেশি সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, যশোরের সাবেক এমটি কাজী নাবিল আহমেদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু। এছাড়া ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ অনেকেই আছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম