আমরা বিভেদে জড়ালে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে: তারেক রহমান

কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকা কিছু ব্যক্তির বক্তব্যে বিভিন্ন দিকে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই দেশ গঠন করতে এবং দেশে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন যদি করতে হয় তাহলে অবশ্যই দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এই সরকারকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। যেই আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মানুষ সমর্থন করেছে তারা যেন সেই আস্থা এবং তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন।
মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের কিছু রাজনৈতিক বন্ধু আমাদের সঙ্গে মতপার্থক্য করছে। মতপার্থক্য হতেই পারে। মতপার্থক্য থাকলে আমরা বসব। আলোচনা করব; যা দেশের মানুষের স্বার্থে এবং দেশের মানুষের কল্যাণে হয় তাই করব। এই মতপার্থক্যকে আমরা কোনোভাবেই বিভেদে রূপান্তর করতে চাই না। আমরা নিজেরা বিভেদে জড়িয়ে পড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ এবং দেশের মানুষ।
তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো যদি বিভেদে জড়িয়ে পড়ি তাহলে অপশক্তি সুযোগ নেবে। দেশ এবং জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বহু ক্ষতির মধ্য দিয়ে বিগত ১৫টি বছর মানুষ অতিবাহিত করেছে। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে সকল প্রকার চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব।
তিনি আরও বলেন, আমরা খেয়াল করে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা চাই এই সরকারকে সমর্থন করতে। আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিবে। যেই ভোটের অধিকার লুণ্ঠন করে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তায় মানুষের মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। জনগণ তাদের নিজেদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যত বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকব গণতন্ত্র তত বেশি সুসংহত হবে। দেশ বিরোধী এবং ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্য নস্যাৎ হয়ে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা আগামীতে দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিতে চাই সেই পরিকল্পনাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরব। আমরা প্রত্যাশা করব অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের পরিকল্পনা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবে। দেশের মানুষ হচ্ছে সব চেয়ে বড় বিচারক। তারাই সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখবে। দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে দেশ পরিচালনার জন্য আগামীতে কাদের দায়িত্ব দেবে।
তিনি আরও বলেন, ৪৫ বছর আগে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেছিলেন। শুরু থেকেই বিএনপির লক্ষ্য ছিল দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং সমৃদ্ধশালী একটি জাতি গঠন করা; কিন্তু গত ১৫টি বছর আমরা কী দেখলাম। ফ্যাসিস্ট হাসিনা গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। গত ১৫টি বছর গুম খুন অত্যাচার নির্যাতনের মধ্যদিয়ে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী দিন কাটিয়েছে। নানা চড়াই উতরাই এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বিএনপি আজকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই আজ বিএনপি জনগণের কাছে একটি আস্থার জায়গায় দাঁড়াতে পেরেছে। বিএনপি আজ জনগণের দলে পরিণত হয়েছে। আমরা কিভাবে জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস ধরে রাখতে পারব সেই প্রচেষ্টা আমাদের আছে এবং আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল, যেই দল জনগণের কথা বলে। বিএনপির সব সময় চেষ্টা করে কিভাবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা যায়।
তারেক রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বে একটি উত্তম পন্থা হচ্ছে ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে দেশ পরিচালনা করা। তাই একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমাদেরও প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা ইতোপূর্বে লক্ষ্য করছি যে, কিছু রাজনৈতিক দলের বন্ধুরা বলছে বিএনপি শুধু নির্বাচন নির্বাচন করে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা নির্বাচন দাবি করব এবং জনগণের কাছে ভোট চাইব- এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক বিষয়টিকে কেউ কেউ অস্বাভাবিক হিসেবে উপস্থাপন করছে। নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে অপশক্তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে।
আমরা যদি গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে পারি, গণতন্ত্রকে যথাযথভাবে চর্চা করতে পারি এবং গণতন্ত্রের চর্চা যদি অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে জাতিকে নিরাপদ রাখতে পারব। দেশে যদি গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকে, মানুষের ভোটের অধিকার যদি নিশ্চিত থাকে তাহলে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি আরও সমৃদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিগত ১৫ বছর আমাদের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। গুম খুন মামলা হামলা এবং অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটাধিকারের দাবি আদায়ের সংগ্রাম আমরা অব্যাহত রাখব।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের কুমিল্লা নগরবাসীর আস্থা অর্জন করতে হবে। তৃণমূলে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করে দলের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে হবে।
এতে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহের সুমন, কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া, মহানগর বিএনপির আহবায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম প্রমুখ।
এর আগে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা টাউন হল মাঠ এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি মহানগর বিএনপির সম্মেলন সমাবেশে পরিণত হয়। সম্মেলনে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবুকে সভাপতি, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুকে সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম আহবায়ক রাজিউর রহমান রাজিবকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।