‘বৃহত্তর ইসলামি ঐক্যে আমাদের প্রয়াস সফল হবে’

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনে দেশ গড়ার কাজ করতে চাই। ইসলামের পক্ষে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য আমাদের প্রয়াস সফল হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চরমোনাইয়ের বার্ষিক মাহফিলের দ্বিতীয় দিন নিজস্ব মাঠে অনুষ্ঠিত ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক নেতাসহ তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়ার ইসলামী নেতারা অংশ নেন। আগামী শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় চরমোনাই পিরের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ মাহফিল শেষ হবে।
চরমোনাই পির রেজাউল করীম আরও বলেন, দেশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠায় দেশে ইসলামপন্থিদের মধ্যে স্থায়ী ঐক্য গড়তে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত। সবার ত্যাগ ও ঐক্যবদ্ধতার মধ্য দিয়েই ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনা সম্ভব। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে একটি বাক্স দিতে চাই। ওলামায়ে দেওবন্দের ধারায় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাই এখন ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম সাহেব এটা করে দেখাতে পারবেন। দেওবন্দি ধারার বাইরে জামায়াতে ইসলামী, সুন্নি এবং আহলে হাদিস আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে ইসলামের পক্ষে একটি বাক্স দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের ইসলামপন্থার মধ্যে ঐক্য ও সংহতির সংস্কৃতি উপস্থাপন করে মামুনুল হক আরও বলেন, আজকে ইসলামকে বিজয়ী করতে দেশের ওলামায়ে কেরামের হাতে অনেক বড় সুযোগ এসেছে। আমরা যদি এ সুযোগের যথাযথ ব্যবহার না করতে পারি তাহলে আগামী দিনে এ জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। আজকের বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের জাতীয় চাহিদা হলো- ইসলামপন্থিরা এগিয়ে আসুক, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
ওলামা সম্মেলনে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক, সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, নায়েবে আমির আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ও অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, শায়খ জকারিয়া ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন বাংলাদেশের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমাদ সিদকী হাফিজাহুল্লাহ প্রমুখ।
এদিকে মাহফিলে আসা মুসুল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে ১০০ শয্যার অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এ হাসপাতালে ১৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরও ৪০ জন চিকিৎসক কাজ করছেন। এছাড়া ১০টি সড়কপথের ও ২টি নৌপথের অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে। অসুস্থ মুসল্লিদের হাসপাতালে পৌঁছাতে কাজ করছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
মাঠগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবকসহ বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির সদস্যরা। মাঠের চারদিকে সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চরমোনাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ সালে। চরমোনাই মাহফিল ও দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ এছহাক রহমাতুল্লাহ। তিনি মারা যাওয়ার পর ১৯৭৭ সাল থেকে এ দরবারের জিম্মাদারি পালন করেন মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম রহমাতুল্লাহ। ২০০৬ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।