‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অগ্রাধিকার পাবে তিস্তা: তারেক রহমান

রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
-67b4bff9662b8.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তাপারের লাখো মানুষের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে মঙ্গলবার দ্বিতীয় ও সমাপনী দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ও সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সমর্থন জানান তিনি। এ সময় তারেক রহমান বলেন, প্রতিবেশী দেশ যদি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয় তাহলে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখবে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য যেসব নদী আছে সেগুলো পুনরায় সংস্কার ও খনন করতে হবে। শহিদ জিয়ার সেই খাল খনন কর্মসূচি আমাদের পুনরায় হাতে নিতে হবে। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে আপনাদের পছন্দের দলকে ভোট দিতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এই পদযাত্রায় তিস্তার দুই পারের পাঁচ জেলায় ১১টি স্থানে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ তিস্তাপারের লাখো মানুষের স্রোত মিলিত হয় ‘তিস্তা রক্ষা’ দাবির মোহনায়। এই দাবি আদায়ের আন্দোলনে ১১টি স্থানে উপস্থিত জনতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারেক রহমান আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ মনে করে প্রতিবেশী দেশের (ভারত) সঙ্গে আমাদের যে অন্যায্য চুক্তি আছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হবে। এ দেশের মানুষ প্রতিবেশী দেশ থেকে আর অন্যায্যতা দেখতে চায় না। ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ আর দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, তিস্তার ন্যায্য পানি আদায়ের জন্য আজকে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। এ পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করছে। ৫০ বছর ধরে ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায়নি। এখন আবার এসেছে তিস্তার অভিশাপ। আজকে তিস্তাপারের লাখো মানুষ বন্যায় ও খরায় জীবনযাপন করছে। এর ফলে লাখ লাখ টাকার শস্যের ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেখেছে মানুষের ঐক্যবদ্ধতা। কীভাবে তারা একটি সংকটে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করেছে। আপনারা যেভাবে বলেছেন, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও’। একইভাবে আমাদের দেশের সবাইকে বলতে হবে, ‘জাগো বাহে বাংলাদেশ বাঁচাও’।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আগস্টে খুনি স্বৈরাচারী দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এ স্বৈরাচার একদিন একটি কথা বলেছিলÑভারতকে যা দিয়েছি তা তারা (ভারত) সারা জীবন মনে রাখবে। তাই ভারত শুধু স্বৈরাচারকে মনে রেখেছে। বাংলার মানুষকে মনে রাখেনি। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে কিছু দেয়নি। শুধু দিয়েছে স্বৈরাচারকে। প্রতিটি দেশেরই তাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বা ঝামেলা থাকে। কিন্তু সেগুলোকে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা হয়। যেটা আমাদের এখানে এতদিন হয়নি।
এদিকে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে পদযাত্রা শেষে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তার হাঁটুজলে নেমে পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করেছেন উত্তরের জনপদের মানুষ। ভারতের উজানে বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের মানুষকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে আওয়াজ তুলেছেন তারা।
তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় তিস্তা ব্রিজের লালমনিরহাট সীমান্ত থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কে এ পদযাত্রা হয়। এতে যুক্ত হন এলাকার হাজারো মানুষ। পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
সমাপনী দিনেও সকাল থেকে তিস্তা নদীবেষ্টিত রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’। সেই সঙ্গে প্রতিবাদ হিসাবে দেশীয় সংগীত, নৃত্য, খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। যারা দুদিন ধরেই অবস্থান করছিলেন তাদের জন্য দিনে ও রাতে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা ছিল।
তিস্তা নদী ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ১১৫ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশের ভেতরে। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত একতরফা বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ছয় লাখ হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য পানি ছাড়ে। যে পানি আশীর্বাদ না হয়ে বেশির ভাগ সময়ে এ দেশের মানুষের জন্য বয়ে আনছে অভিশাপ। ফলে অসময়ে তিস্তাপারে বন্যা দেখা দিচ্ছে। বছর বছর বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আসাদুল হাবিব দুলু ছিলেন তিস্তা সড়ক সেতুর রংপুর ও লালমনিরহাট দুই অংশে। সেখানে আরও ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান, রংপুর জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, কাউনিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, গংগাচড়া মহিপুর এলাকায় ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন, উলিপুর থেতরাই এলাকায় ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, হাতিবান্ধা তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলের অন্যান্য নেতা।