কোনো বৈষম্য বরদাশত করব না: জামায়াত আমির

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৯ পিএম

দেশের মাটিতে আর কোনো বৈষম্য বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
দলীয় নিবন্ধনের ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেন আমাদের নিবন্ধন আটকে রেখেছেন? আমাদের নিবন্ধন তো জালিম সরকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই জুলুম কি আপনারাও আমাদের ওপরে করবেন? এজন্যই কি হাজার-হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে? হাজার-হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে? বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো বৈষম্য বরদাশত করব না। সব বৈষম্যের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
রাজধানীর পল্টন মোড়ে মঙ্গলবার বিকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কারাবন্দি নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে এদিন বিক্ষোভ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এই কর্মসূচি আয়োজন করে। এর আগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলকে কেন্দ্র করে লোকে-লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে পল্টন মোড়, বায়তুল মোকাররম, নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল, জিরো পয়েন্ট ও প্রেস ক্লাব এলাকা। পরে জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ গিয়ে বিক্ষোভ শেষ হয়। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন ডা. শফিকুর রহমান।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মুহা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হলো, কিন্তু ফ্যাসিবাদের কঠিন সাক্ষী আজহারুল ইসলাম মুক্ত হলেন না কেন, সরকারের প্রতি এমন প্রশ্ন রেখে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, গত ১৩ বছর ধরে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। আমরা ১৩ বছর সহ্য করেছি আর ১৩ মিনিটও অপেক্ষা নয়, আজহারকে মুক্তি দিন।
শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল। ফ্যাসিবাদের বিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে হিংস্র প্রথম থাবাটি এসেছিল জামায়াতে ইসলামীর ওপরে। সব শীর্ষ নেতাকে এক এক করে বন্দি করা হয়। সে সময় দলের গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের কাঁধে। তিনি তখন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে তাকেও গ্রেফতার করা হয়।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা তো নিজ থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম। এই উদারতা আমরা দেখিয়েছিলাম। ভবিষ্যতেও এই উদারতা আমরা দেখিয়ে যাব। কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলাম কবে মুক্তি পাবেন, সেটি আমরা জানতে চাই সরকারের কাছে।
তিনি বলেন, আমরা তো চাইনি, কল্পনাও করিনি, এভাবে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সমাবেশ-বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।
আমিরে জামায়াতের এমন ঘোষণায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা আশা করব, সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। রাজনীতির মজলুম নেতাদের যেভাবে একে একে মুক্তি দিয়েছেন তেমনিভাবে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে।
হুঁশিয়ারি দিয়ে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা ভদ্র, কিন্তু আমরা বোকা নই। আমাদের ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন। ভদ্ররা যখন শক্ত হয় তখন কি পরিমাণ শক্ত হতে হয় তা গত সাড়ে ১৫টা বছর বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। আমি অন্যদের কথা বলব না কে কি করেছেন, কার সঙ্গে আপস করেছেন, আমি বলতে চাই না। মহান আল্লাহর দেওয়া শক্তির কারণে গত সাড়ে ১৫টি বছর জামায়াতে ইসলামী কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে আপস করেনি। বহু আপসের প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে। ফাঁসির কাষ্ঠে আমাদের নেতাদের পাঠানোর আগে জনে জনে দফায় দফায় প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমাদের বীর নেতারা সেই প্রস্তাবগুলো পায়ে ঠেলে ফেলে দিয়েছেন, আমরা সেই বীরদের উত্তরসূরি সুতরাং আর ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। তাকে মুক্তি দিন।
জামায়াত আমির স্লোগান ধরে বলেন, আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ আবু সাঈদ মুগ্ধ। এই যুদ্ধ চলবে ইনশাআল্লাহ। মেহেরবানি করে আমাদের আর কেউ চোখ রাঙাবেন না। ফ্যাসিবাদের ভাষায় কেউ কথা বলবেন না। কথা বলবেন রাজনীতিবিদের ভাষায়। আমরা অভিনন্দন জানাব। কিন্তু মেহেরবানি করে চোখ রাঙাবেন না। এই সংগঠন কারও চোখ রাঙানি পরোয়া করে না।
তিনি আরও বলেন, অতীতেও দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্রের পরেও সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। তবে সব ষড়যন্ত্র একে একে নস্যাৎ করে দিয়েছেন আল্লাহ। আমরা আশাবাদী, আগামীতেও সব ষড়যন্ত্র আল্লাহ ব্যর্থ করে দেবেন। আমরা সব ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন বলেন, আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় আসতে হবে কখনো ভাবিনি। এইটা আমাদের ন্যায্য অধিকার। আজহার ভাইকে মুক্তি ও জামায়াতের নিবন্ধন দাঁড়ি-পাল্লা যদি ফিরিয়ে না দেওয়া হয়, আমরা পুরো ঢাকা মহানগরীতে বিক্ষোভ করব।
দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা দেখেছি প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা তার মামলা থেকে মুক্তি নিয়েছেন অথচ দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে অন্যায়ভাবে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন আজহার ভাই। কোন কারণে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।