Logo
Logo
×

রাজনীতি

আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণ মানবে না: মির্জা ফখরুল

Icon

যশোর ব্যুরো

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০১ পিএম

আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণ মানবে না: মির্জা ফখরুল

দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনারা স্থানীয় নির্বাচন আগে করতে চান। স্থানীয় নির্বাচন আগে করলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গর্তের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে। তারা পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস করবে। দেশে অরাজকতা তৈরি হবে। তাই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিন। জাতীয় নির্বাচন যত দ্রুত দেবেন, দেশে তত দ্রুত শান্তি ফিরে আসবে। আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার চেষ্টা করা হলে এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

মঙ্গলবার বিকালে যশোর শহরের টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো ও দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সবাই ভালো আছি, বলতে পারলে খুব ভালো লাগত; কিন্তু আমরা সবাই ভালো নেই। চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আমরা এখনো নিরাপদ নই। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। কয়েক হাজার নেতাকর্মী খুন ও ৭ শতাধিক গুমের শিকার হয়েছেন। যশোর জেলার অন্তত ৮৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। হাসিনা আয়নাঘর করে সেখানে নেতাকর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতন, খুন, গুম করেছে। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। অনেক ছেলে শহিদ হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ছিল আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পাব। ভোটের অধিকার ফিরে পাব। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পাব। দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছরেও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।

ছাত্রদের নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতায় থাকার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করুন। নতুন দল গঠন করছেন, এতে আমরা খুশি। ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করবেন, এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দল গঠন করুন। নির্বাচন দিন। জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় বসেন। আমাদের জনগণের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমাদের সাথে জনগণ আছে। আপনারা সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করবেন, জনগণ এটা মানবে না।

সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। বিএনপির ৩১ দফা প্রস্তাবের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর অনেক মিল রয়েছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার; কিন্তু সংস্কারের নামে অন্য গন্ধ পাচ্ছি। ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। এ দেশে ওয়ান ইলেভেন সফল হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন, আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ উপহার দেবেন। জনগণ তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন কিন্তু আপনারা স্থানীয় নির্বাচন আগে করতে চান। স্থানীয় নির্বাচন আগে জনগণ মেনে নেবে না।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের নেত্রী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। আন্দোলন, সংগ্রামে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। আমাদের দল ভাঙার বহু চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু সফল হয়নি।

তিনি বলেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হওয়া পাটকল চালু ও যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাবিরা নাজমুল মুন্নী, আবুল হোসেন আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি, মিজানুর রহমান খান প্রমুখ।

সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর ১২টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে শার্শা, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, মনিরামপুর কেশবপুর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। দুপুর ২টার আগেই বিশাল ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। ময়দানের বাইরের সড়কেও হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে বক্তব্য শোনেন। সমাবেশ জনসভায় রূপ নেয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম